ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বেঁচে ফিরলেও ভরণপোষণ পাচ্ছেন না আলী

প্রকাশনার সময়: ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:৪৪

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার আলী হোসেন। পেশায় ভ্যানচালক। সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে পা কেটে গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে বেঁচে ফেরেন। কিন্তু কাটা পা নিয়ে এখন হাঁটতে পারেন না। কাজকর্ম করতে না পারায় জুটছে না পরিবারের ভরণপোষণ-ওষুধের টাকা। সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। ফলে অসহায় হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকার শেষ সম্বল জমিসহ ঘরটুকুও বিক্রি করে দিতে হয় তাকে।

জানা যায়, আলী হোসেন উপজেলার বইলর ইউনিয়নের বাঁশকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে হার্টের সমস্যায় ভোগা ভ্যানগাড়িচালক আলী হোসেন গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল বাজারের মাছের আড়তের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় পা কেটে গুরুতর আহত হন। বোনের বাড়ি বেড়িয়ে সিএনজি করে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় সিএনজিচালকসহ মারা যায় আরও একজন। সে সময় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। দীর্ঘদিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয় তাকে। তবে নিজে বেঁচে ফিরলেও স্ত্রী-সন্তানসহ সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার কাটা পা নিয়ে এখনো হাঁটতে পারেন না। হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে। এ অবস্থায় সপ্তাহে প্রায় তিন হাজার টাকার ওষুধ লাগে। তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে চারজন পড়াশোনা করতো। অর্থাভাবে তাদের পড়াশোনা বন্ধ রয়েছে। সবার বড় ছেলে রিফাত হাসান অষ্টম শ্রেণি, মেয়ে আঁখি আক্তার সপ্তম শ্রেণি, তানিশা আক্তার দ্বিতীয় শ্রেণি ও রিয়াদ হাসান প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। কোলের শিশু আঁচল আক্তারের বয়স এখনো বছর পেরোয়নি।

পরিবারের ভরণপোষণ ও নিজের ওষুধের টাকা জোগাতে না পেরে নিজের থাকার শেষ সম্বল জমি ও আশ্রয়ণ প্রকল্প-১ থেকে প্রাপ্ত ঘরটিও বিক্রি করে দিতে হয়েছে আলী হোসেন ও রাজিয়া দম্পতিকে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বছর তিনেক আগে আলীর নিজের জমিতে ঘরটি নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এটি নিশ্চিত করেছেন আলী হোসেনের স্ত্রী রাজিয়া খাতুন।

দুরবস্থায় সম্বল হারিয়ে আলী হোসেন হাউমাউ করে কেঁদে উঠে নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘আমার ঘরে দেহুইনগা এক মোট চাইলও নাই। এহন যে আমি চিকিৎসা করবাম, টেহা-পয়সা কিছুই নাই। আমার পাঁচটা সন্তান। আমি বড় অসহায় আছি। এহন আমার নিরুপায় অইয়া এই বিডাডা (ভিটা) বিক্রি করতে অইছে। আমি যে চিকিৎসা করবাম-টেহা আমার নাই, খরচপাতি নাই।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আলী হোসেন আরও বলেন, ‘ঘরটা বিক্রি কইরা এক বস্তা চাইল কিনছি। কেউ আমারে সহযোগিতা করে নাই। তাই, নিরুপায় অইয়া ঘরটা বিক্রি করতে অইচে। এ ছাড়া আমার কি করা, মৃত্য ছাড়া আমার কিছু করার নাই। এই পাঁচটা সন্তান, বউ-বাচ্চা নিয়া আমি কোথায় দাঁড়াব? ঘরে আমার অর্থ-সম্পদ কিচ্ছু নাই। তাই নিরুপায় অইয়া এই জায়গাটাও বিক্রি কইরা দিছি।’

আলী হোসেনের স্ত্রী রাজিয়া খাতুন নয়া শতাব্দীকে বলেন, এক বছর ধইরা এইরুম (এরকম) কষ্টে আছি। একবেলা খাবার খাই আমি, সারাদিনে একবেলা রানধি। আমার বাপটাও ঘরে পরা, আমারে যে দেখবো এমন মানুষও নাই। তাই অসহায় হইয়া জায়গা বিক্রি করছি, ঘর বিক্রি করছি।

কাচামাল ব্যবসায়ী আব্দুর রশীদ নয়া শতাব্দীকে বলেন, আর্থিক অবস্থা আগের থেকে খারাপ। বিপদে পড়ে ঘর বিক্রি করে দিছে। আমার থেকে ৫/১০ টাকার কইরা মাল নিতাছে, খায়তাছে, বাচ্চা-কাচ্চা নিয়া চলতাছে।

বইলর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মশিউর রহমান শাহানশাহ বলেন, আলী হোসেন আগে থেকেই হতদরিদ্র মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনার পর তার স্ত্রী ও পাচ সন্তান নিয়ে খুব অসহায় জীবনযাপন করছে। আমার পক্ষ থেকে আমি চেষ্টা করবো ও পাশাপাশি সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা যায় কি-না তাও দেখব।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ