ভ্রমণক্লান্ত শরীর আর ক্ষুধা নিয়ে পেট পুরে খেতে ইচ্ছে করে না এমন মানুষের জুড়ি মেলা ভার। যদি মুখরোচক গরুর মাংসের সঙ্গে থাকে হরেক রকম সবজি বা ভর্তা। তাহলে তো কথাই নেই।
এমনই মানসম্মত বক্সভর্তি খাবার যদি মেলে মাত্র একশ টাকায়, তাহলে তো জিভ সামলানো দায়। শুধু গরুর মাংসই নয়, ৮০ টাকায় মুরগির মাংস আর ৭০ টাকায় এই দোকানেই মিলছে দেশি মাছ দিয়ে কবজি ডুবিয়ে খাবার ব্যবস্থা।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মাঝে এমন খাবারের কারণেই দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার ‘হোটেল ভাত ঘর’। ২০১৮ সাল থেকে কুয়াকাটা জিরোপয়েন্ট এলাকায় মসজিদ সংলগ্ন এই খাবার হোটেলটি পরিচালনা করছেন যুবক লিটন।
প্রতিদিন দুপরে এই হোটেল থেকে শতাধিক ভাতের বাটি সরবরাহ করা হয় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এ ছাড়া ঘরে বসে স্বাচ্ছন্দ্যে ক্ষুধা নিবারণ করেন দূর-দুরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। তবে ক্রেতাদের নজর কেড়েছে লিটনের বক্সভর্তি খাবার পরিবেশনের অভিনব পদ্ধতি। বালুময় এলাকায় ধুলা এবং মশা,মাছির কবল থেকে খাবার সুরক্ষিত রাখতে বক্সের বিকল্প নেই বলছেন ক্রেতারা। সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে লিটনের নিজ বাড়িতেই এসব খাবার রান্না করেন তার স্ত্রী রোজী আক্তার।
বরিশাল থেকে আসা পর্যটক মশিউর জানান, বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে কুয়াকাটায় এসেছেন তিনি। তবে বেশ কয়েকটি খাবার হোটেল ঘুরে এই হোটেলে এসে অবাক হয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, এতো কম মূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পাবো তা আসাও করিনি। একবারে বাড়ির রান্নার স্বাদ পেয়েছি এই হোটেলে।
স্থানীয় দোকানি নাহীদ বলেন, লিটনের খাবার হোটেলের মান খুবই ভালো। কোনো বাসি খাবার নেই, এটাই এই হোটেলের সবচেয়ে ভালো দিক।
হোটেলের পরিচালক লিটন খান জানান, কুয়াকাটায় এক সময়ে রেন্ট-এ কারের ব্যবসা ছিল তার। তবে লোকশানে পরে বিকল্প চিন্তা নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এখন প্রতিদিন ক্রেতাদের অর্ধেক চাহিদাও মেটাতে পারছেন না। গড়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪শ বাটি খাবারের চাহিদা থাকলেও তার অর্ধেকটাও রান্না হচ্ছে না। কিন্তু গড়ে শতাধিক বিক্রির জোগার করতে পারছেন।
লিটন জানান, প্রতিদিন তার খাবার তালিকায় একশ টাকায় গরুর মাংস, ৮০ টাকায় মুরুগি এবং ৭০ টাকায় মাছ দিয়ে খাবার বিক্রি করা হয়। সঙ্গে ক্রেতাদের জন্য সবজি, ভর্তা এবং ডাল দিচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, মাছের মধ্যে তেলাপিয়া, রুই, পোয়া টেংরাসহ প্রভৃতি প্রজাতির মাছ দিয়ে থাকেন খাবারে। তবে গরুর মাংস ৪/৫ টুকরা হলেও মুরগি এবং মাছ সঠিক পরিমাণে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ফ্রিতে সবজি, ভর্তা এবং ভাত ইচ্ছে মতো খেতে পারেন। ছুটির দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় হোটেলের সব খাবার বিক্রি হয়ে যায়।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানান, লিটনের খাবার ঘরে স্বল্পমূল্যে মাছ,মাংস দিয়ে দুপুরের খাবার বিক্রি করা হয়। তবে কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। সবাই তার দোকানের খাবার খেয়ে সন্তুষ্ট।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ