কৃষি, খাদ্য ও শস্য উদ্বৃত অঞ্চল শেরপুরে এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে আলুখেতে দেখা দিয়েছে ‘লেট ব্লাইট’ রোগ। খেত থেকে আলু তোলার শেষ সময়ে এ রোগের আক্রান্তে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। সার কীটনাশকের চড়া দামের সঙ্গে ‘লেট ব্লাইট’ রোগ দমনে স্প্রে কিনতে বাড়তি খরচ যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে কৃষকের জন্য।
এদিকে মাঠ পর্যায়ে রোগ প্রতিকারে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। মঙ্গলাবার সরেজমিনে গেলে কথা হয় শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকার কৃষক মোজাম্মেল হকের সাথে। তিনি জানান, এবার এক একর জমিতে করেছিলেন আলুর আবাদ। ভারী কুয়াশা ও তীব্র ঠান্ডায় শেষ সময়ে লেট ব্লাইটে আক্রান্ত হয়ে ৪০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে তার।
তিনি বলেন, আমার প্রতি কাঠায় ৫ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। কিন্তু এখন উঠেছে মাত্র ৩ হাজার টাকা করে। সে হিসেবে একরে ৪০ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে।
কেবল মোজাম্মেল হকই নন, গেল মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় এবারও অধিক লাভের আশায় আলুচাষে নেমেছিলেন শেরপুরের অনেক কৃষক।জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় এবার ৫ হাজার ২১১ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। কিন্তু চলতি মৌসুমে আলুখেতে লেট ব্লাইট রোগের প্রাদুর্ভাবে দিশাহারা স্থানীয় কৃষকরা।
রৌহা এলাকার আলুচাষি কবির মিয়া বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে এবার আলু খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দোকান থেকে নিয়মিত কীটনাশক এনে স্প্রে করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।
নকলা উপজেলার চন্দ্রকোণা এলাকার রাজন শেখ বলেন, কীটনাশক কোনটা ব্যবহার করবো, সেটার কোনো সমাধানই পাচ্ছি না। একে তো কীটনাশকের দাম বেশি, আরেক দিকে একদিন পর পর কীটনাশক দিয়ে উল্টো আলু গাছের ক্ষতি হচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে। এবার খুব ক্ষতির মধ্যে আছি।
কৃষকরা বলছেন, আলু রোপণের দেড় থেকে ২ মাসের মাথায় গাছের কাণ্ড ও পাতা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। বার বার ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও আলুর গাছ বাঁচাতে পারছেন না কৃষকরা। এতে হতাশ হয়ে পড়ছেন তারা। এবার আলু উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
একই এলাকার কৃষক ইদ্রিস মিয়া বলেন, শুধু গোল আলুই না, বীজ আলুও লেট ব্লাইটে আক্রান্ত হয়েছে। এবার বীজ আলু নিয়েও বিপাকে পড়তে হবে স্থানীয় কৃষকদের।
কৃষক লতিফ মিয়া বলেন, যারা বিএডিসির চুক্তিভিত্তিক চাষি, তারাও এবার চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়বে। তাদের খরচ তোলা নিয়েও শঙ্কায় আছে কৃষকরা।
এদিকে গত মৌসুমে আলুতে লাভ বেশি পেয়ে অনেকেই এবার ধার-দেনা ও ব্যাংক ঋণ করে আলুচাষ করেছিলেন। কিন্তু এ রোগের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের।
কৃষক আজগর আলী বলেন, সময়মতো কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে মাঠকর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক এনে প্রয়োগ করলেও, তেমন কাজে আসছে না। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে এ রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ থেকে উত্তরণে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
শেরপুরের খামারবাড়ীর উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে এ রোগের সমস্যা থাকবে না বলে আশা করছি।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ