নরসিংদীর রায়পুরায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার কার্যক্রম বন্ধ করে গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে শাখাটির এজেন্ট শহিদুল ইসলাম লিটন উধাও হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কয়েক কোটি টাকা নিয়ে তিনি এখন পলাতক রয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এ ঘটনার পর আব্দুল কাইয়ুম (৪৫) নামে ব্যাংকটির এরিয়া ম্যানেজার শনিবার বিষপান করলে সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। গণমাধ্যমের কাছে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আব্দুল কাইয়ুমের স্ত্রী আমেনা বেগম।
নিহত আব্দুল কাইয়ুম উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের রামনগর মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা। সে এরিয়া ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন। তার অধিনে রায়পুরায় ৩০টি আউটলেট (এজেন্ট শাখা) ছিলো। অন্যদিকে এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার পরিচালক শহিদুল ইসলাম লিটনের বাড়ি একই উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে। ঘটনার পর থেকে তিনি এখনও পলাতক রয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মহেষপুর ইউনিয়নের আলগী বাজারের সততা এন্টারপ্রাইজ নামে এই ব্যাংকের কার্যালয় তালাবদ্ধ। এ খবর পেয়েই ওই শাখার ভুক্তভোগীরা কার্যালয়ের সামনে ভিড় করতে থাকেন।
এরিয়া ম্যানেজারের মৃত্যুর খবরে তার বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলগী বাজার আউটলেটের (এজেন্ট শাখা) গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার পর থেকেই কাইয়ুমের উপর মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করেছেন ব্যাংকটির আর.এম. রেদোয়ান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। এক পর্যায়ে রেদোয়ান গ্রাহকদের সকল টাকা পরিশোধ করতে হবে এ সংক্রান্তে কাইয়ুম এর কাছ থেকে জোরপূর্বকভাবে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। বারবার কর্তৃপক্ষের এমন চাপ সইতে না পেরে কাইয়ুম শনিবার সকালে নিকটস্থ মাহমুদাবাদ বাজার থেকে একটি বিষের বোতল কিনে এনে বিষপান করেন। বিষপানের কিছুক্ষন পর স্বজনরা টের পেয়ে প্রথমে কাইয়ুমকে ভৈরবের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তার অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাইয়ুম সোমবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় মৃত্যু বরন করেন বলে জানান তার স্ত্রী আমেনা বেগমসহ স্বজনরা।
কাইয়ুমের মৃত্যুর ব্যাপারে ব্যাংকটির কর্মকর্তা (আর.এম) রেদোয়ান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে দায়ী করছেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী। এ ঘটনার পর থেকে ব্যাংকটির অন্যান্য কর্মকর্তারা নিজেদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায় বলে অভিযোগ নিহতের স্বজনদের।
এদিকে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা জানান, ডাচ-বাংলা ব্যাংককে বিশ্বস্ত হিসেবে অনেকেই এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। তাদেরকে শাখা থেকে জমা রশিদও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন গ্রাহকদের না জানিয়ে কৌশলে টাকা আত্মসাৎ করে রোববার শাখাটি তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। টাকাসহ কর্মকর্তা লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অতিদ্রুত তাকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত এরিয়া ম্যানেজারের আত্মহত্যা ও টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি বলে জানান রায়পুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মীর মাহাবুবুর রহমান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা (আর.এম) রেদোয়ান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগযোগ করতে গেলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। ডাচ-বাংলা ব্যাংক নরসিংদীর ম্যানেজার ইনচার্জ মো. আনিসুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান এবং সাংবাদিকদেরকে হেড অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
নয়াশতাব্দী/একে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ