ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

৯ বছরেই কাঁধে তুলে নিয়েছে পরিবারের গুরুদায়িত্ব!

প্রকাশনার সময়: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:২৭ | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:৫০

ফাতিমা আক্তার, বয়স ৯ বছর। অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার তীব্র ইচ্ছা থাকলেও দারিদ্রতাই যেন পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা লাভের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও এই অল্প বয়সেই কাঁধে তুলে নিয়েছে পরিবারের গুরুদায়িত্ব।

দুই বছরের ছোট বোনের খাবার এবং বাবার চিকিৎসা খরচ জোগাতে লেখাপড়ার পাশাপাশি পান বিক্রি করে ফাতিমা। এই শিশুর বাস্তব জীবনের গল্প, সিনেমার গল্পকেও হার মানায়।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউপির মস্তফাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতিমা। ওই গ্রামের বৃদ্ধ ফজলু গাজীর মেয়ে সে।

কৃষক ফজলু গাজী দুই বছর ধরে প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। একটি হাত সম্পূর্ণ অবশ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, দুই পা দিয়েও ঠিকভাবে পথ চলতে কষ্ট হয়। ফলে বাধ্য হয়ে সংসারের অভাব ঘোঁচাতে বাবার পাশে দাঁড়িয়েছে ফাতিমা। হাতে তুলে নিয়েছে খিলি পান বিক্রির থালা। এখন হাটে ঘুরে ঘুরে খিলি পান বিক্রি করে এ শিশু।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে কলাপাড়া পৌর শহরে পানের থালা হাতে ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের কাছে খিলি পান বিক্রি করতে দেখা যায় ফাতিমাকে।

সেই সময়ে তার সাথে কথা হলে শিশুটি জানায়, সকাল থেকে ঘুরে ঘুরে ১৩৫ টাকার খিলি পান বিক্রি হয়েছে তার। এ থেকে যা রোজগার হবে তাই দিয়ে বাজার কেনার পাশাপাশি ছোট বোনের জন্য মজার খাবারও কিনতে হবে।

শিশুটি জানায়, সপ্তাহে বিভিন্ন হাটে ঘুরে ঘুরে পান বিক্রি করে অসুস্থ বাবাকে আর্থিক সাহায্য করা এখন তার দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। কিন্তু হাটের দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোতে স্কুলে যায় সে।

পান বিক্রিতে কষ্ট হয় কিনা জানতে চাইলে মিষ্টি হাসি দিয়ে ফাতিমা জানায়, অনেক আগে তার এক ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তাই এখন সে-ই সংসারে বাবার একমাত্র ভরসা।

ফাতিমার পাশেই একটি চায়ের দোকানে বাজারের থলে হাতে বসে আছেন তার বৃদ্ধ বাবা ফজলু গাজী।

ফজলু গাজী জানান, তিনি অসুস্থ হওয়ায় বিকল্প কোনো পথ না পেয়ে মেয়ের হাতে পানের থালা তুলে দিয়েছেন। মেয়ে যাতে হাটের ভিড়ে হারিয়ে না যায়, তাই চোখে চোখে রেখে পাহারা দিচ্ছেন। তার হাত স্বাভাবিক থাকলে মেয়েকে কষ্ট দিতেন না বলে দুচোখ ভিজিয়ে কান্না করেন তিনি।

মস্তফাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা কুলসুম জানান, ছোট্ট এই শিক্ষার্থীর পরিবার খুবই অসহায়। তবে সপ্তাহে কয়েকদিন স্কুলে আসে ফাতিমা।

তিনি বলেন, মেয়েটি মেধাবী হলেও অর্থাভাবে পায়ে জুতা পর্যন্ত পরতে পারে না। তার বাবা-মা বৃদ্ধ। তবে মেয়েটির লেখাপড়ার জন্য যথেষ্ট ইচ্ছা আছে।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শিশুটির কথা শুনে খুব খারাপ লাগছে। আমি খোঁজ নিচ্ছি। যতটুকু সম্ভব তার পাশে থাকার চেষ্টা করবো।

নয়া শতাব্দী/এসআর/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ