চট্টগ্রাম নগরে বিস্তৃত ফসলের মাঠজুড়ে চাষ হচ্ছে শীতকালীন টমেটো। দুচোখ যে দিকে যায় শুধু টমেটো খেতের মাঠ। দৃষ্টি জুড়ানো এমন দৃশ্যই জানান দেয় ওখানেই টমেটো চাষের একচ্ছত্র রাজত্ব।
সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা পতেঙ্গায় শীতের মৌসুমে টানা চার মাস চলে টমেটো চাষ। এই এলাকায় প্রায় ৪৮০ জন কৃষক-দিনমজুর ফসল আবাদের কাজে ব্যস্ত থাকেন। প্রতিদিন ভোরে শতাধিক ট্রাক-ভ্যানে করে টমেটো যায় নগরের খুচরা বাজারগুলোতে। প্রতিদিন অন্তত ৫ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি হয় স্থানীয় কৃষকদের।
গেল বছর ৬৬৫ মেট্রিক টন টমেটো আবাদ হয়েছে পতেঙ্গা চার এলাকা জুড়ে। উত্তর পতেঙ্গা, দক্ষিণ পতেঙ্গা, পাঠানটুলী এবং দক্ষিণ হালিশহরের মধ্যে সব থেকে বেশি চাষ হয় দক্ষিণ হালিশহর এলাকায়। নতুন বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৪০ মেট্রিক টন টমেটো বিক্রি করেছে স্থানীয় কৃষকরা। তবে গত বছরের তুলনায় এখন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় কমছে চাষের পরিমাণ।
পতেঙ্গার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার নূর-ই-ফেরদাউসী আকলিমা বলেন, পতেঙ্গা এলাকার সবজির কদর রয়েছে। বিশেষ করে টমেটোর ফলন তুলনামূলক ভালো। তবে বিভিন্ন স্থাপনায় আবাদি জমির ব্যবহারের ফলে চাষের পরিমাণ কমে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, পতেঙ্গা এলাকায় খালি জমির পরিমাণ ৯৯৪ হেক্টর। এর মধ্যে ৯৬৫ হেক্টর আবাদ যোগ্য জমি থাকলেও কৃষিজ পণ্য আবাদ হয় ৯৩০ হেক্টর। এর মধ্যে প্রফিটআর্লি, বিজলী, হিরুপ্লাস, দীপালী জাতের টমেটো চাষ হয় পতেঙ্গা এলাকায়।
স্থানীয় কৃষক বক্কর মিয়া বলেন, দিনের পর দিন আমাদের এলাকায় কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। গত দুই বছরে দীর্ঘ দিনের বাপ দাদাদের পুরনো পেশা থেকে সরে যাচ্ছে অনেকে। কৃষি পেশা ছেড়ে চাকরি দিকে ছুঁটছে আবাদি জমির অভাবে। বর্তমানে পতেঙ্গা, আনন্দবাজার, হালিশহর নিউমার্কেট আশপাশের এলাকাতে শীতের সবজির সরবরাহ করা হয় এই চার এলাকা থেকে। সব চেয়ে বেশি সরবরাহ হয় বন্দরটিলা, ইপিজেড, কর্ণফুলী মার্কেট এবং রিয়াজউদ্দিন বাজারে।
এদিকে শীতকালীন মৌসুমে টমেটোর পাশাপাশি শাকের জন্য বিখ্যাত পতেঙ্গা এলাকা। লালশাক, পালংশাক, কলমিশাক, পুঁইশাকসহ নানা ধরনের শাক চাষ হয় পতেঙ্গাতে। এ ছাড়া লাউ, মিষ্টিকুমড়া, মুলা, শিমসহ মৌসুমি সবজির চাষ হয়। এসব শাক বিক্রি হয় প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। বর্ষার মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ বন্ধ থাকে এ এলাকায়। আশপাশে থাকা শিল্পকারখানার বর্জ্য পাশের খাল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে ভালো পানির মাধ্যমে সেচ দেওয়া যায় আবাদি জমিতে। নগরের মানুষদের ব্যবহার করা নালার জল দিয়ে দেওয়া হয় গাছে সেচ।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ