মাঘের শীতে বাঘে কাঁন্দে এই প্রবাচ-প্রবচনটি লালমনিরহাটবাসীর জন্য সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে। সোমবার সকাল ৯টায় জেলায় কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে। এই শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে জেলার বাসিন্দারা।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) তীব্র শীতের হাত থেকে শিশু কিশোরদের বাঁচাতে সরকারি প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করেছেন জেলা শিক্ষা বিভাগ। শীতের তীব্রতা চরাঞ্চলে আরও বেশি। চরাঞ্চলে গাছপালা নেই। শীতের সাথে বাতাস বইছে। এতে কাহিল হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের নদীপাড়ের মানুষেরা।
লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, লালমনিরহাটের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে গেছে। এজন্য জেলার সকল মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজ সোমবার ও কাল মঙ্গলবার দুই দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাপমাত্রা স্বাভাবিক না হলে এ ছুটি বাড়তে পারে।
লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানান, চলমান শৈত্য প্রবাহের কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। শৈত্য প্রবাহ চলমান থাকায় লালমনিরহাট জেলার সোমবার সকাল ৮টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ায় লালমনিরহাট জেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সূত্রোক্ত স্মারক মোতাবেক বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এমতাবস্থায়, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তদুর্ধ্ব হলে লালমনিরহাট জেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো। তিনি কোনো নির্দিষ্ট দিন উল্লেখ করে পত্র দেননি।
এদিকে গত দুই দিনের হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। জুবুথবু হয়ে পড়েছে মানুষ, গবাদিপশু ও প্রাকৃতিকভাবে থাকা প্রাণিকুল। এ অবস্থা করুন আকার ধারণ করেছে চরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। কুয়াশার সাথে অব্যাহত হিমেল হাওয়ায় শীত বেড়েছে চরে। রাতভর পড়েছে বৃষ্টির মতো কুয়াশা। দিনে পড়েছে ধোঁয়াটের মতো শিশির। কদিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। এমন শীতের মুখে উত্তরাঞ্চলের মানুষ গত ৫০/৬০ বছরেও পড়েনি।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ হতে পারে শৈত্য প্রবাহ। কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতে কৃষি নির্ভর তিস্তা ও ধরলা চরাঞ্চলের মানুষ পড়েছে বিপাকে। প্রচণ্ড শীতেও শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন বের হচ্ছেন জীবিকার সন্ধানে। এখন পর্যন্ত নদী চরের অনেক এলাকায় সরকারি সহায়তা পাননি বলে অনেকের অভিযোগ।
এদিকে হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় আরও বেশি শীত অনুভব হচ্ছে। এদিকে প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে দরিদ্র মানুষজন। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন গ্রামাঞ্চলের মানুষজন। প্রচণ্ড শীতে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা ডায়রিয়া এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। আউটডোরেও রোগীর সংখ্য অনেক বেড়েছে।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় শীতে শিশু ও বয়স্কদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, শীতের কারণে কয়েকদিন ধরে হাসপাতালগুলোতে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত পর্যাপ্ত সেবা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে সরকারি হাসপাতালটিতে। শীতের তীব্রতা বেড়ে গেলে কি হবে সেটা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল।
এদিকে জেলায় প্রায় ১২ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের মধ্যে শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ নিম্ন আয়ের, তারা দিনমজুর শ্রেণির। নুন আনতে পান্থা ফুরায় তাদের। তারা প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে পড়েছে বিপাকে। চরের মানুষের অবস্থা আরও ভয়াবহ। এ জেলার ৫টি উপজেলায় তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, বুড়িতিস্তা ও রত্ন নদী দ্বারা বেষ্টিত। চরে কমপক্ষে দুই লাখ লোকের বসবাস রয়েছে। তাদের কাছে নেই কোনো প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র বা শীতের কম্বল। এখনো পর্যন্ত চরাঞ্চলে কোনো ব্যক্তিগত, প্রতিষ্ঠান বা সরকারিভাবে শীতের কম্বল বা শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ চলছে। বরাদ্দকৃত দুই দফায় পাওয়া ২৮ হাজার পিচ কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যাহা বিতরণ শেষের দিকে। সংশ্লিষ্ট দফতরে আরও চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ