ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

রামগতি-কমলনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশনার সময়: ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:২০

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই শুরু হয়েছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দৌড়ঝাঁপ। জেলার ৪টি উপজেলার মধ্যে মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে এ দুটি উপজেলা রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রায় ১০ নেতা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী এসব প্রার্থীরা তাদের অনুসারীদের দিয়ে ফেসবুক ও সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেও জানান দিচ্ছেন। অনুসারীরাও নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে জনগণের সামনে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন।

চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্রই এখন আলোচনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে। কে প্রার্থী হচ্ছেন, কার জনপ্রিয়তা কেমন? অতীতে কে কেমন কাজ করছেন- এসব আলোচনা এখন তুঙ্গে। নেতারাও দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল চলতি মাসেই হতে পারে- এমন গুঞ্জন উপজেলার সর্বত্র। তাই এই নির্বাচনে কারা প্রার্থী হচ্ছেন- এমন আলোচনায় সরগরম পুরো উপজেলা।

উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে কিনা- তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। তাই এবারের প্রেক্ষাপটও ভিন্ন।

বিএনপির দুই নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান, জাতীয় নির্বাচন আর স্থানীয় নির্বাচন এক নয়। তাই আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।

এতে ধারণা করা হচ্ছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও প্রার্থী দিতে পারে। এ অঞ্চলটি মূলত বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত। সঙ্গে রয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশেরও শক্তিশালী অবস্থান।

এ উপজেলায় রয়েছে ইসলামী আন্দোলনের (হাতপাখা) দুইবারের ইউপি চেয়ারম্যান। দলটির শক্তিশালী ভোট ব্যাংক জয়-পরাজয়ের হিসাব নিকাশ পাল্টে দিতে পারে! রয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রবের শক্তিশালী সংগঠনও। সব মিলিয়ে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিয়ে চলছে নানা হিসাব নিকাশ।

আ.লীগ মনে করছে, বিএনপি-জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নেবে না। আর এ কারণেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রার্থী নির্বাচনে আসলে, আ.লীগ প্রার্থীর বিজয় অনেকটাই কঠিন হতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এদিকে নির্বাচনের দিন-তারিখ ঠিক না হলেও প্রার্থীরা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এলাকায় ভোটারদের কাছে তাদের প্রার্থী হওয়ার খবর ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সর্বত্র উপজেলা নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা-সমালোচনা।

নয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কমলনগর উপজেলা এবং ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত রামগতি উপজেলা। কমলনগর উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে এক লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৭। আর রামগতি উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৬০ হাজার ৫৬ জন।

কমলনগরে আগ্রহীদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মেছবাহ উদ্দিন বাপ্পি, লক্ষ্মীপুর জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি নুরুল আমিন মাস্টার, কমলনগর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব নুরুল হুদা চৌধুরী, উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রাজু, আব্দুর রহমান দিদার ও নুরুল আমিন অপি বাঘা।

এদিকে রামগতিতে আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, রামগতি উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল ওয়াহেদ, উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি ড. আশ্রাফ আলী চৌধুরী সারু, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান শরাফত উদ্দীন আজাদ সোহেল ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবি আব্দুল্লাহ।

তারা সবাই নির্বাচন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

ইসলামী আন্দোলন কমলনগর উপজেলা সভাপতি মুফতী শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘অতীতে আমরা স্থানীয় সকল নির্বাচনে অংশ নিয়েছি, আর জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছি। উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের আলোকেই আমরা কাজ শুরু করবো।’

কমলনগর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রাজু বলেন, ‘উপজেলা আ.লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দল এখন ঐক্যবদ্ধ এবং আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। তাই এবারের নির্বাচনে আমি দলের মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’

কমলনগর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব নুরুল হুদা চৌধুরী বলেন, ‘দলীয়ভাবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের সিদ্ধান্ত পেলে উপজেলা নির্বাচন করার ইচ্ছা রয়েছে। পরিস্থিতির আলোকে সবকিছু ক্লিয়ার হবে।’

উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মেছবাহ উদ্দিন বাপ্পি বলেন, ‘আমি ৫ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। কারো উপকার করতে না পারলেও আমার কারণে কোনো মানুষের ক্ষতি হয়েছে- এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবেনা। সব সময় এলাকার উন্নয়ন ও জনগণের জন্য কাজ করেছি। মামলা-হামলামুক্ত কমলনগর গড়তে অতীতের ন্যায় এবারও প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।’

নয়া শতাব্দী/ডিএ/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ