সাতক্ষীরার দেবহাটায় ভূমিহীন অধ্যুষিত জনপদ ঢেপুখালিতে অস্ত্রসজ্জিত ভূমিদস্যুদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ভোররাতে ঘুমন্ত ভূমিহীন জনপদে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এসময় ভূমিদস্যুদের ছোড়া গুলি ও পরপর কয়েকটি বিস্ফোরণের বিকট শব্দে মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভূমিহীন জনপদে।
একপর্যায়ে ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশি সহায়তা চান ভূমিহীনরা। কিন্তু ভূমিদস্যুদের অপতৎপরতা ক্রমশ বাড়তে থাকায় পুলিশ পৌঁছানের আগেই ঐক্যবদ্ধভাবে চারপাশ থেকে ভূমিদস্যুদের ঘিরে ফেলে পিটুনি দেয় ভূমিহীনরা।
এসময় দেশিয় অস্ত্রসহ আটক ভূমিদস্যু বাহিনী প্রধান রুহুল আমিনসহ প্রায় ডজনখানেক অস্ত্রধারীকে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসী।
জানা যায়, ভূমিহীন জনপদের সালেহা খাতুন, ছফেদ আলী সরদারসহ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সখিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সালামতুল্যাহ গাজি, কাজলা ইন্দ্রনগরের রহিম পাড় ও করিম পাড়, নাংলা গ্রামের হারুন বিশ্বাস এবং দেবীশহর গ্রামের কিংকর স্বর্ণকারের মালিকানাধীন নওয়াপাড়া ইউনিয়নের রামনাথপুর মৌজার ৪৬১৭ দাগে প্রায় ১৪০ বিঘা জমি ১৯৯৭ সালে পাওয়ারনামা স্বত্ত্বে কিনে, সেখানে বসতি গড়ে তোলেন অর্ধশতাধিক ভূমিহীন পরিবার। জমিটি একপর্যায়ে খাস খতিয়ানে অর্ন্তভুক্ত হলে আইনি প্রতিকারের জন্য সরকারের সঙ্গে মামলায় জড়ান মালিকপক্ষ।
তবে সম্প্রতি ভূমিহীনদের হটিয়ে জনবসতিপূর্ণ ওই গোটা জনপদ জবরদখলের হুমকি দিয়ে আসছিলেন কালাবাড়িয়া গ্রামের বর্তমান বাসিন্দা ও কালীগঞ্জের সন্যাসীরচক গ্রামের মৃত রুপচাঁদ গাজির ছেলে ডাকাতি, হত্যা ও অস্ত্রসহ অন্তত ডজনখানেক মামলার আসামি, চিহ্নিত ভূমিদস্যু রুহুল আমিন ও তার স্ত্রী তানিয়া বেগম। এ নিয়ে গেল কয়েক মাস যাবৎ ওই জনপদে আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ভোররাতে ভূমিদস্যু রুহুল আমিন, তার স্ত্রী তানিয়া বেগম ও ছেলে তানভীর ওরফে সজিব দেশিয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত অন্তত ৩০/৪০ জনের বাহিনী নিয়ে অতর্কিতে ভূমিহীন জনপদে হামলা, গুলিবর্ষণ ও একে একে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে গোটা জনপদ দখলে নেয়ার চেষ্টা করে। অবস্থা বেগতিক দেখে এসময় ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশি সহায়তা চান ভূমিহীনরা। একপর্যায়ে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে চারদিক থেকে ভূমিদস্যুদের ঘিরে ফেলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পাশাপাশি ভূমিহীনদের পিটুনিতে আহত ভূমিদস্যু বাহিনীর সদস্যদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায় দেবহাটা থানা পুলিশ।
এসময় দেবহাটা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এসএম জামিল আহমেদ বলেন, ‘জমি দখলকে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে ওই এলাকায় পুলিশের নজরদারি বাড়ানোসহ সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আহত ও আটকদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশিয় তৈরী পাইপগান সদৃশ অস্ত্রসহ বেশকিছু ধারালো রাম দা, কুড়াল ও অন্যান্য দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান বলেও জানান পুলিশ সুপার এসএম জামিল আহমেদ।
নয়া শতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ