চুয়াডাঙ্গায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত। হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত। সূর্যের দেখা মিলছে না দিনের বেশিরভাগ সময়। এতে বেশি দুর্ভোগে পড়ছে নিম্নআয়ের মানুষ। আবহাওয়া অফিস বলছে, মাঘের প্রথম দিকেও এ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ১৪ জানুয়ারি জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আলমডাঙ্গা উপজেলার সৃজনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের সহকারী শিক্ষক জিল্লুর রহমান জানান, ঘন কুয়াশা এবং শীতের তীব্রতার কারণে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি অনেক কম।
শ্রমজীবী মানুষেরা বলছেন, কয়েকদিন ধরে এখানে সূর্যের দেখা মিলছে না। শীতের কারণে কাজ-কর্মে ব্যাঘাত ঘটছে। ঠিকমত কাজে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের খুদিয়াখালী আবাসনের বদর উদ্দিন জানান, প্রচণ্ড শীতে কাজে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই বসে বসে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছি।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সবুজপাড়ার রিকশাচালক মতিয়ার রহমান বলেন, পেটের তাগিদে ঘরের বাইরে বের হতে হয়েছে। পেটে ভাত না থাকলে শীত-গরম আর বর্ষায় কী আসে যায়। রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি কম। ঘুরে ঘুরেও তেমন একটা ভাড়া হচ্ছে না। অলস সময় পার করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা রেলবাজারের মুদি দোকানি সাইফুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে দোকান খুলে বসে আছি। বেচা-বিক্রি নেই। এতো বেশি শীত যে, ভাষায় বলে বোঝানো যাবে না।
জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায়, শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাছাড়া সূর্যের দেখা না মেলায় এবং বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ায় ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে পারছে না। মাঝে মাঝে উত্তরের হিমেল হাওয়া এই শীতকে আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে বেশি দুর্ভোগে পড়ছে নিম্ন আয়ের ও খেটে খাওয়া মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না অনেকেই।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান বলেন, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে। জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশ ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়া থাকায় সূর্যের দেখা মিলছে না। সূর্য না দেখা যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে তীব্র শীতের কারণে ১০০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল, ৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের চেম্বারে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে সদর হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোয় ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, কয়েকদিন ধরে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতে শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তীব্র শীতে বেশি নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগীকে চিকিৎসা দিতে হবে।
একইসঙ্গে সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শও দেন তিনি। ডা. আসাদুর রহমান বলেন, শীতে আক্রান্তদের টাটকা ও গরম খাবার খাওয়াতে হবে। কোনোভাবেই বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। পানি ফুটিয়ে পান করাতে পারলে ভালো। আর শিশুদের সকাল-সন্ধ্যায় গরম পোশাক দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। কোনোভাবেই বেশি ঠান্ডা লাগতে দেয়া যাবে না।
এদিকে, তীব্র শীতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ঘুরে ঘুরে অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের হাতে শীত নিবারনের জন্য কম্বল তুলে দেয়া হচ্ছে। এর আগেও একধাপে কম্বল বিতরণ করা হয়।
নয়া শতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ