শেরপুর জেলা শহরের শিববাড়ি মহল্লার বাসিন্দা ও জামালপুর জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা এবং তার বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) রাত আনুমানিক ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ গুরুতর আহত হন এবং পাশাপাশি তার বাড়িঘর ভাঙচুর করে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত একটি ল্যাপটপ ও জরুরি কাগজপত্র লুটপাট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ।
এ বিষয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০/২৫ জনকে আসামি করে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ জেলার নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভূরদী গ্রামের মৃত জমসেদ আলীর বড় ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শেরপুর শহরের শিববাড়ি মহল্লায় বসবাস করে আসছেন। তবে বর্তমানে তিনি জামালপুরে জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।
পরিবার ও থানায় লিখিত অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ শিববাড়ি মহল্লায় নিজের বাড়ি তোলার কাজ শুরু করেছেন। শুরু থেকেই এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী সন্ত্রাসী প্রকৃতির কিছু যুবক তার কাছে চাঁদা চেয়ে আসছিল। চাঁদা না দেওয়ায় অকারণে প্রায়ই আগুন পোহানোর অজুহাতে আব্দুল হামিদের বাড়ি নির্মাণের সামগ্রী কাঠ ও বাঁশসহ অন্যান্য জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে নষ্ট করে আসছে তারা।
ঘটনার দিন অফিস বন্ধ থাকায় বাড়িতেই ছিলেন তিনি। এদিন পূর্বপরিকল্পিতভাবে সন্ধ্যা থেকেই সন্ত্রাসী মাদকসেবীর দল হামিদের বাসার আশেপাশে একত্র হতে থাকে। কৃষিবিদকে রাত পৌনে ৮টার দিকে শহর থেকে বাসার দিকে আসতে দেখেই তারা নির্মাণ সামগ্রীর মধ্যথেকে বেশকিছু বাঁশ ও কাঠ নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এসময় আব্দুল হামিদ অতিভদ্রতার সাথে তাদের মৌখিকভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তার ওপর দা, লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। পরে তিনি আত্মরক্ষার্থে কোনরকমে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে গেট তালাবদ্ধ করে দেন।
এতেও ক্ষান্ত থাকেনি ওই সন্ত্রাসীদল; তারা বাসার প্রাচীর টপকে বাসার ভেতরে গিয়ে আব্দুল হামিদকে বেদম মারপিট শুরু করে। এতে কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ চোখ ও মাথায় গুরুতর আঘাত পান এবং মাঠিতে লুটিয়ে পড়েন। এসময় তার ডাক-চিৎকার শুনে তার ৬ বছরের সন্তান জারিপ না বুঝেই বাবার দিকে এগিয়ে আসলে, সন্ত্রাসীরা তাকেও এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এমতাবস্থায় আব্দুল হামিদের স্ত্রী ও মেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলে তাদের উদ্দেশে সন্ত্রাসীরা দা উঁচিয়ে তেড়ে গেলে, তারা দৌড়ে হাফবিল্ডিং ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে কোনক্রমে আত্মরক্ষা করেন।
পরে সন্ত্রাসীরা সুকৌশলে আব্দুল হামিদের বসতঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে ওয়ারড্রপের তালা ভেঙে বাসার কাজের জন্য রাখা নগদ ৫ লাখ টাকা, স্ত্রী ও মেয়ের সব মিলিয়ে অন্তত ১০ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত একটি ল্যাপটপ ও জরুরি কাগজপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায় এবং বেশ কিছু আসবাবপত্র এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে ভাঙচুর করে।
পরে স্থানীয়রা ও আত্মীয়-স্বজন গুরুতর আহত কৃষিবিদ আব্দুল হামিদকে উদ্ধার করে রাতেই শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। পাশাপাশি এ বিষয়ে চিহ্নিত মাদকসেবী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মামলায় উল্লেখিত ৯ আসামি হলেন- শিববাড়ি মহল্লার কার্তিকের ছেলে তিলক (২২), গৃর্দ্দানারায়ণপুর মহল্লার মৃত হাছুইন্নার ছেলে ছামিউল আলিম (৩০) এবং শিশির (২৪), সিয়াম (২২), তানভির (২৪), অর্পণ (২৫), শান্ত (২২) ও বালা ঠাকুর (২৫)। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সদস্যরা কৃষক ও কৃষিবান্ধব কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্মম হামলা ও সন্ত্রাসী কায়দায় তালা ভেঙে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত ল্যাপটপ ও জরুরি কাগজপত্র লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শস্তির দাবি জানান।
এছাড়া দেশের কৃষি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সংগঠন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সংগঠন ও কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি সুষ্ঠু বিচার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি সঠিক সময়ে সুষ্ঠু বিচার না করা হলে, কৃষিবিদ ও বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের উদ্যোগে প্রয়োজনে দেশবাপী কর্মসূচির ডাক দেওয়া হতে পারে বলেও জানান নেতারা।
নকলা উপজেলার ভূরদী ছাল্লাকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ের শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, ‘আমার দেখা কৃষি কর্মকর্তাদের মধ্যে জামালপুর জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ সবচেয়ে শান্ত প্রকৃতির, ভেজাল মুক্ত ও মেধাবী একজন কৃষি কর্মকর্তা। মেধার জন্য শিশুকাল থেকেই তিনি সবার প্রিয়পাত্র ছিলেন।
নকলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষা-গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, ‘মোহাম্মদ আব্দুল হামিদের ওপর যে সন্ত্রসী হামলা হয়েছে, তা নিঃস্বন্দেহে পূর্বপরিকল্পিত বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাই এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যে বা যারা এই নিন্দনীয় ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি’।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত। দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে।
নয়া শতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ