চোর সন্দেহে সোহাগ মুন্সী (২৭) নামের এক যুবককে চলন্ত লঞ্চ থেকে নামিয়ে স্পিডবোটযোগে অনত্র নিয়ে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুধু তাই নয়, চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ওই যুবকের হাত ও পায়ের অঙুলে সূচ ফোটানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার সোহাগ মুন্সীকে উদ্ধার করে রোববার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত সোহাগ মুন্সী একই ইউনিয়নের চরওয়াডেল গ্রামের বাসিন্দা মো. ওমর আলী মুন্সির ছেলে এবং পেশায় জেলে।
স্বজন, স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বাবা ওমর আলীর সঙ্গে রাগ করে শনিবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে কালাইয়া লঞ্চঘাট থেকে এমভি ঈগল লঞ্চে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন সোহাগ। রাত সোয়া ৭টার দিকে লঞ্চটি ধূলিয়া ঘাটে পৌঁছায়। ওই সময় সোহাগের প্রতিবেশী মো. লোকমান খানের (৩০) নেতৃত্বে ছয়-সাতজনের একটি দল স্পিডবোটযোগে ওই লঞ্চে উঠে সোহাগকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে যায়।
এর আগে বুধবার (১০ জানুয়ারি) দিবাগত রাতের যে কোনো সময় লোকমান খানের দুটি ও আলী আহম্মেদ খানের চারটি গরু চুরি হয়।
অভিযোগ, ওই (ছয়টি) গরু চুরির ঘটনায় চোর সন্দেহে সোহাগকে লঞ্চ থেকে উঠিয়ে নিয়ে চর রায়সাহেব এলাকায় নদীর পাড়ে নিয়ে প্রথম দফায় পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে মোটরসাইকেলযোগে একটি মাছের ঘেরের কাছে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় নির্যাতন করে, আকব্বর আলীর ঘরে নিয়ে আটকে রাতভর নির্যাতন করা হয়।
সেখান থেকে রোববার (১৪ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে চরওয়াডেল খানকা এলাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নিয়ে মারধর করা হয় এবং গরু চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য সোহাগের হাত ও পায়ের আঙুলে সূচ ফোটানো হয়।
পরে স্থানীয় চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে সোহাগকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক ওরফে আলকাচ মোল্লা বলেন, ‘গরু চুরির অভিযোগে মারধর করেছে- এ ঘটনা সত্য। যেহেতু চুরির কোনো প্রমাণ নাই, তাই তাকে (সোহাগ) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।’
এ বিষয়ে জানার জন্য লোকমানের মোবাইলে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার বড় ভাই মো. ফোরকান বলেন, ‘গরু চুরির বিচারের খবর পেয়ে সোহাগ পালিয়ে যাচ্ছিল। এ কারণে তাকে ধরে আনার পর কয়েকটা চড়-থাপ্পর দেওয়া হয়েছে। নির্যাতনের অভিযোগ সত্য না।
তবে সোহাগকে আটকে রাখার কথা স্বীকার করেন তিনি।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শোনিত কুমার গায়েন বলেন, ‘এ বিষয়ে তাকে কেউ জানাননি। তবে কাউকে চুরির অভিযোগে আটক করে মারধর করার কোনো সুযোগ নাই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নয়া শতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ