বিভিন্ন সময়ে বন্ধু-বান্ধবদের ধার দেওয়া সাড়ে তিন লাখ টাকার মধ্যে অবশেষে হালখাতার মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা তুলতে সক্ষম হয়েছেন স্কুল শিক্ষক আব্দুল আওয়াল।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কুড়িগ্রাম-সোনাহাট সড়কের অন্ধারীরঝাড় বাজারে ছামিয়ানা টাঙ্গিয়ে তিনি এ হালখাতার আয়োজন করেন।
আব্দুল আওয়াল সরকার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীরঝাড় এম.এ.এম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। এর আগে তার এ হালখাতার আয়োজন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক আলোচনা হয়। হালখাতায় আসা প্রত্যেককে বিরিয়ানি দেন তিনি।
হালখাতার মাধ্যমে ধারের টাকা ফেরত দিতে পেরে খুশি আব্দুল আউয়াল সরকারের বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনেরা। তারা বলেন, বর্তমান সময়ে ধার নিয়ে কেউ আর টাকা ফেরত দিতে চান না। তার এই ধারের হালখাতার মাধ্যমে বিপদে-আপদে ধার নেওয়ার প্রচলনটি টিকে থাকবে বলে মনে করছেন তারা।
টাকা ধার নেওয়া যোবাইদুল ইসলাম বলেন, আমি গত ৬ মাস আগে আমার মেয়ের ভর্তির জন্য তার কাছ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা ধার নেই। পরে সমস্যার কারণে টাকা ফেরত দিতে পারিনি। এরপর নির্বাচনের আগে আমার বাসায় হালখাতার চিঠি দেন তিনি। আজ এসে টাকা পরিশোধ করলাম। ঋণ পরিশোধ করতে পেরে ভালোই লাগছে।
শিক্ষক আব্দুল আউয়াল সরকার বলেন, দীর্ঘ দিনের ধার দেওয়া টাকা আমার বন্ধু-বান্ধবের কাছে লজ্জায় চাইতে পারিনি। তাই এক বন্ধুর দোকানে হালখাতা খেতে গিয়ে এই চিন্তা মাথায় আসে। একজনের বিপদ-আপদে অন্যজন পাশে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। এই চিন্তা থেকেই আমি সবাইকে টাকা ধার দিতাম। আমার কাছে টাকা থাকার পর কেউ চাইলে আমি না করতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, মানুষকে টাকা ধার দেওয়ার কারণে মা আমাকে অনেক গালাগালি করতেন। আমিও অনেক বার প্রতিজ্ঞা করেছি আর কাউকে টাকা ধার দেব না। কিন্তু প্রতিজ্ঞা রাখতে পারি না।
সেই শিক্ষক বলেন, এভাবে টাকা ধার দিতে দিতে একসময় সাড়ে তিন লাখ টাকা বাকি পড়ে যায় বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের কাছে। হালখাতা করে ধারের অর্ধেক টাকা তুলতে পেরেছি। আশা করছি, বাকি টাকাটাও ফিরে পাব। অনেকে ঢাকায় আছে তাই তারা হালখাতায় আসতে পারেনি। তারা আমাকে ফোন করে টাকা দেওয়ার কথা বলেছে।
জানা গেছে, গত ৩ বছরে ৩৯ জনকে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা ধার দেন শিক্ষক আব্দুল আউয়াল সরকার। দুই সপ্তাহ আগে ধারের টাকা আদায়ে হালখাতার জন্য চিঠি দেন তাদের। এর মধ্যে প্রায় ২০ জন হালখাতার মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করেন।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ