স্বাধীনতার ৫২ বছর পর প্রথম মন্ত্রী পেয়েছে ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের নান্দাইলের জনগণ। এই আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল আব্দুস সালামকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করার খবরে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ ও আতশবাজি ফুটিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে নান্দাইলবাসী।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন আব্দুস সালাম। তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
আব্দুস সালাম ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে (নৌকা প্রতীকে) সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬ সালের ১২ জুন) জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহুরুল ইসলাম খানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১১ হাজার ৬৬০ ভোট বেশি পেয়ে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর) বিএনপির প্রার্থী খুররম খান চৌধুরীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৭০ হাজার ৪৬৬ ভোট বেশি পেয়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ (৭ জানুয়ারি ২০২৪) নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল প্রতীক) আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিনের চেয়ে ১৯ হাজার ২৭১ ভোট বেশি পেয়ে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
জানা যায়, আব্দুস সালাম ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার নান্দাইল ইউনিয়নের রসূলপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি প্রয়াত আব্দুল ওয়াহেদ ও নূরজাহান দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান। তিনি ১৯৪২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিজ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বেসামরিকভাবে পাঞ্জাব থেকে বিএ পাস করেন। সামরিক পিএসসি, আরসিডিএস যোগ্যতা অর্জন করেন।
ব্যক্তি জীবনে আব্দুস সালাম চিটাগং হিলট্র্যাক্টস ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন, ইন্টারন্যাশান্যাল সেন্টার ফর ইন্টেগ্রেটেড মাউন্টেইন জেভেলপমেন্ট (ICIMOD) ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ছিলেন।১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই) এর সাবেক প্রধান ও ব্রাজিলের রাষ্টদূত ছিলেন আব্দুস সালাম।
৩৩ বৎসর চাকরির পর ১৯৯২ সালে অবসরপ্রাপ্ত হয়ে ৫৪ বৎসর বয়সে ১৯৯৬ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।
আব্দুস সালাম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। ১৯৯৬ সালের পর থেকে এক টানা নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এ ছাড়াও তিনি হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশেন (মাল্টি বিলিয়ান ডলার রাষ্ট্রায়াত্ত জ্বালানি কোম্পানি) রেসিডেন্ড প্রতিনিধি, আজীবন সদস্য ঢাকা ক্লাব, আজীবন সদস্য রাওয়া (রিটায়ার্ড আর্মডফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশান), আজীবন সদস্য ভাটিয়ারী গল্ফ এ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব।
ক্রীড়াঙ্গণেও তার পদচারণা রয়েছে, দায়িত্ব পালন করছেন সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে। সদস্য ছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশান, প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ শুটিং ফেডারেশান, ভাইস প্রেসিডেন্ট ভাটিয়ারী গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব, কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব,আর্মি গলফ ক্লাব, রয়েল মিডসারে গল্ফ ক্লাব যুক্তরাজ্য।
অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক শিক্ষাবিদ আলী আফজাল খান বলেন, এই প্রথম আমরা মন্ত্রী পেয়েছি। আমরা নান্দাইলবাসী সত্যিই গর্বিত। আজ আনন্দের শেষ নেই।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক চৌধুরী স্বপন বলেন, আজ আমরা নান্দাইলবাসী ধন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম স্যারকে পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি।
নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শাহান বলেন, আজ আমাদের আনন্দের সীমা নেই। স্যার মন্ত্রীত্ব পাওয়ার মাধ্যমে ইতিহাসের উচ্চতায় স্থান পেল ঐতিহাসিক নান্দাইল। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ