ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

তীব্র শীতে নাকাল নকলাবাসী

প্রকাশনার সময়: ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:৩৪

পৌষের শেষদিকে এসে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরে ঘন কুয়াশার দাপট কিছুটা কমলেও হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডায় শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন। শীতের দাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার অস্বাভাবিক হারে কমেছে। প্রায় প্রতি রাতে বৃষ্টির ফোঁটার মতো পড়ছে কুয়াশা। দিনের মধ্য ভাগ তথা দুপুর পর্যন্ত দেখা মিলছে না সূর্যের।

বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্য কিছুটা উত্তাপ ছড়ালেও বিকেল হতেই তাপমাত্রা আবারও নিম্নগামী হতে থাকে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন কৃষি শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। শিশু ও বৃদ্ধসহ ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শীত উপেক্ষা করে কৃষকরা আলু, সরিষা, ভুট্টা, গম খেতে কাজ করছেন। গ্রাম এলাকায় মাঝে মধ্যেই খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় দরিদ্র মানুষজনকে।

কনকনে শীতে ঠান্ডা পানি ও কাদায় নেমে বোরো ধানের চারা রোপণ এবং বীজতলা থেকে ধানের চারা তোলা ও খেত তৈরির কাজে খুবই কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের। প্রতিনিয়ত শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন।

আবহাওয়ার বৈরী পরিস্থিতির কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বোরো বীজতলা। বিভিন্ন এলাকার বীজতলার ধানের চারা লালচে-হলুদ হয়ে যাচ্ছে, সঠিকভাবে বোরো আবাদ করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তাগণ জানিয়েছেন, এখনও ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী জানান, এরকম আবহাওয়া আরও কিছু দিন স্থায়ী থাকলে কিছু কিছু বীজতলার ধানের চারা নষ্ট হতে পারে। এ জন্য মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের করণীয় বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন।

শীতের তীব্রতা বাড়ায় উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার অস্বাভাবিক হারে কমেছে। এবিষয়ে বানেশ্বরদী ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার শহিদুল ইসলাম জানান, নকলার প্রতিটি গ্রামে শীতের তীব্রতা বাড়ার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কমেছে। কোনো কোনো অভিভাবক শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তাদের সন্তানদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। আবার কিছু কিছু শিক্ষার্থী ঠান্ডার কারণে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে চাচ্ছে না। তাই আপাতত উপস্থিতি কিছুটা কমেছে।

বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সহকারী শিক্ষক মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, ঠান্ডায় শিক্ষার্থীরাও কাবু হয়ে যায়। প্রমাণস্বরূপ জানান, সপ্তম শেণিতে ক্লাস নেওয়ার সময় দলীয় কাজ দিলে ছেলেরা হঠাৎ বলে উঠে- স্যার হাত দিয়ে কলম ধরতে পারতেছি না। একটু সময় দেন হাতে তাপ লাগিয়ে আসি।

তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত খোলামেলা স্থানে স্থাপিত হওয়ায় শ্রেণিকক্ষে বাতাস ও কুয়াশা প্রবেশ করে সহজে। তাই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে শীতে কাবু হওয়া শিক্ষার্থীরা ছিঁড়াফাঁটা কাগজ বা খড়কুটা দিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায়।

ঠান্ডার কারণে অতিব জরুরি কাজ ছাড়া লোকজন বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। ফলে রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশাচালকরা যাত্রীর অভাবে ভাড়া কম পাচ্ছেন। এতে তাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।

এদিকে গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় গত মাসের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি রোগী নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, নকলা হাসপাতালে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগী বাড়লেও মারাত্মক কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। বড় ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া উম্মুল বানিন বলেন, জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম মহোদয়ের পরামর্শক্রমে নকলা উপজেলার প্রতিটি গুচ্ছগ্রামে ও সরকারের উপহার দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীদের হাতে হাতে কম্বল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া দরিদ্র শীতার্তদের শীত নিবারণের জন্য এলাকা ঘুরে ঘুরে কম্বল বিতরণ কাজ চলমান আছে বলেও ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন জানান।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিনের মধ্যেই শীতের তীব্রতা ও হিমেল হাওয়া কমবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ