ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে রংপুর অঞ্চল। একই সঙ্গে জেঁকে বসেছে শীত। শীতের তীব্রতা বাড়ায় কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। নিম্ন আয়ের দিনমজুর মানুষের আয় রোজগার হ্রাস পেয়েছে। তাদের দিন কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে। স্বল্প আয়ের মানুষ পড়েছে মহা বেকায়দায়। ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা নেই। দিনের বেলায় সড়ক মহাসড়কে যানবাহনের হেড লাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে।
সূর্যের দেখা না থাকায় তাপমাত্রার পারদ নেমে গেছে। পাশাপাশি দেশের রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে। এমন ঠান্ডার তীব্রতায় উত্তরাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রংপুর অঞ্চলের জেলায় বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বৃহস্পতিবার চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতভর হিমেল হাওয়ায় জনজীবন কাবু হয়ে পড়ে, দিনের বেলাতেও দেখা মেলেনি সূর্যের।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশে দিনে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতের অনুভূতি বেড়েছে। এ পরিস্থিতি আরও অন্তত দুদিন থাকতে পারে। এবার পৌষের শুরু থেকে হিমালয়ের পাদদেশের জেলা লালমনিরহাটে শীত জেঁকে বসছে। পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে শুরু হয়ে গেছে শৈত্যপ্রবাহ। রাতভর উত্তরের হিমেল হাওয়ার সঙ্গে কুয়াশার দাপটে জবুথবু জনজীবন। সূর্যের দেখা না মেলায় কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষে যাপিতজীবন। তীব্রঠান্ডায় কৃষি কাজ ও স্বল্প আয়ের শ্রমিকদের কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষের আয় রোজগার কমে যাওয়ায় দ্রব্যমূল্যের বাজারে নাভিশ্বাস উঠেছে।
এদিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শীতকালে হিমালয়ের পাদদেশে বায়ুর চাপ অনেক বেশি থাকে। বাংলাদেশে বায়ুর চাপ কম থাকে। বায়ুর চাপের ধর্ম, বেশি ঘনত্ব থেকে কম ঘনত্বের দিকে ছুটে যাওয়া। সেই হিসেবে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে হিমেল বায়ু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতকালে সূর্য তির্যকভাবে (হেলে) আলো ছড়ায় বাংলাদেশে। সূর্যের এই আলোতে, সূর্যের উত্তাপ ছড়াতে সময় লাগে। অন্যদিকে, শীতকালে রাতের চেয়ে দিন ছোট হওয়ায় এবং মাঝেমধ্যে ঘন কুয়াশা থাকায় সূর্যের উত্তাপ পরিপূর্ণভাবে ছড়াতে পারে না। এতে উত্তরের জেলা রংপুরসহ দেশের উত্তরের জেলায় শীত বেশি অনুভূত হয়।
জীবীকার তাগিদে লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের সকালে কাজে যোগ দেওয়া খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সীমাহীন কষ্টে আছেন রিকশা-ভ্যানচালক ও কৃষি শ্রমিকরা। বেশি ঠান্ডায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রিকশা-ভ্যানে উঠতে চায় না। কনকনে শীতের কারণে দৈনন্দিন আয় কমে গেছে এসব শ্রমজীবী মানুষের।
প্রতিবছর শীতে উত্তরের মানুষ বেশি দুর্ভোগে পড়ে। এবারও একই অবস্থা। কৃষি জমিতে খোলা আকাশের নিচে কনকনে ঠান্ডায় কাজ করা যায় না। হাত পা, শরীর ভিজে যায়। ঠান্ডায় কিছুক্ষণ পর হাত- পা জমে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। হাত ও পায়ে কোনো অনুভুতি থাকে না। কাজ কর্মে যেতে না পারায় নিম্ন আয়ের মানুষের আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
শীতের তীব্রতা বাড়ছে কুড়িগ্রামেও। তাপমাত্রা কমার পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে জেলার অধিকাংশ এলাকা। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, এ জেলায় বুধবার সকাল ৭টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার সকালে ছিল ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি। নতুন বছরের শুরুর দিন থেকে তীব্র শীতে দুর্ভোগে পড়েছে এই জেলার মানুষ। হিমেল হাওয়া বাড়িয়েছে শীত। কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের এই জনপদ।
ঘন কুয়াশায় দিনের বেলাও সড়কে যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। ঠান্ডা বাতাস আর বৃষ্টির মতো ঝরে পড়া কুয়াশার কারণে কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ পড়ছে ভোগান্তিতে। শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তীব্র ঠান্ডায় সবজিখেত ও বীজতলা নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় চাষিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
একই সঙ্গে দিনাজপুর ও নীলফামারীর ওপর দিয়েও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ভারতের দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার হয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে মিয়ানমার পর্যন্ত ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া আরব সাগর থেকে জলীয় বাষ্প ও কিছু মেঘ বাংলাদেশের দিকে ভেসে আসছে। আরও দুদিন দিল্লি-উত্তর প্রদেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে কুয়াশা কেটে যাবে।
উত্তরের তিন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহ আরও অন্তত দুদিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক। তিনি বলেন, গত দিনের তুলনায় ঢাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে। আমাদের ধারণা, আপাতত আর কমবে না।
৭ জানুয়ারি ভোটের দিন নাগাদ সারাদেশে তাপমাত্রার পারদ আরও নামতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে অতি ঘন কুয়াশা পড়তে পারে, যা দেশের কোথাও কোথাও গড়াবে দুপুর পর্যন্ত। অতি ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হতে পারে বিমান, নৌপরিবহন ও সড়কে যান চলাচল। ঘন কুয়াশা শীতের অনুভূতি বাড়াবে। মনে হবে ২-৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা চলছে, আসলে তা ৭-৮ ডিগ্রি থাকবে। বিশেষ করে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী ও নওগাঁ এলাকায় শীত বাড়বে। এ সময় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ