সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাককে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। পেটানোর হুমকি দেওয়া এ বক্তব্যের একটি ভিডিওটি ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়। এর ফলে জেলায় আলোচনা সমালোচনা ঝড় বইছে।
বৃহস্পতিবার নির্বাচনি সহিংসতা মামলার আসামিসহ তার অনুসারীদের গ্রেফতার করলে তাদের মুক্তির দাবিতে নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে কালিহাতী থানার সামনে সড়ক অবরোধের সময় এসব কথা বলেন। কালিহাতীর রাজনীতিতে কৃষিমন্ত্রীর প্রভাব বিস্তারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে অসৌজন্যমূলক ও আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘রাজ্জাককে আমি পেটাবো। কত বড় নেতা হইছে...বাচ্চা। আমার টাকায় লেখাপড়া কইরা, ওয়ান-ইলেভেনে সংস্কারবাদী হইছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলে মাফ করিয়েছি। বেইমানের বাচ্চা, ঘুষ খেয়ে টাকা হইছে না। ওর টাকা আমি... ঢুকামু, ও তো আমারে চিনে না।’ ওইদিন টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কের কালিহাতীতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় দুপাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন শত শত যাত্রী। আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ি) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। আর হুমকিদাতা সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
এদিকে ওই সময় আসামিদের গ্রেফতারের খবর শুনে আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী মোজাহারুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মালেক ভূঁইয়া, কালিহাতী পৌর মেয়র নুরন্নবী, পৌর আওয়ামী লীগের সম্পাদক আলমগীর হোসেনসহ নেতাকর্মীরা থানার দিকে আসতে থাকেন। সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ দুই পক্ষের মধ্যে অবস্থান নিয়ে এক পক্ষকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়। এ সময় নেতাকর্মীরা কালিহাতীর মাটি শেখ হাসিনার ঘাঁটি বলে স্লোগান দেয়।
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে নৌকার মনোনীত পরাজিত প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু বলেন, এটা কোনো ভদ্র লোকের ভাষা হতে পারে না । এটা মুর্খতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। একজন ভদ্র লোকের ব্যাপারে যে ভাষায় গালমন্দ করা হয়েছে এটি যে কোনো মানুষ সহজভাবে মেনে নিবে না। এ বিষয়ে আমি নিন্দা প্রকাশ করছি।
লতিফ সিদ্দিকীর অনুসারী বাংড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসমত আলী অভিযোগ করে বলেন, কালিহাতী আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে নির্বাচন করেছেন। এ কারণে মন্ত্রী তাদের হুমকি-ধামকিও দিয়েছেন বলে জানান। যার কারণে লতিফ সিদ্দিকী তার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি বলেন, একজন সাবেক মন্ত্রীর অপর এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন কুরুচিহীন বক্তব্য কেউ আশা করে না।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে বিজয়ী হন লতিফ সিদ্দিকী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি ৭০ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার পেয়েছেন ৫৪ হাজার ৭৫ ভোট। লতিফ সিদ্দিকী এর আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একটি সভায় হজ ও তাবলিগ জামাত সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার এবং মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়। গত সেপ্টেম্বরে তিনি কালিহাতীতে গণসংযোগ শুরু করেন।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ