রাজশাহীর ছয়টি আসনে কম ভোট পাওয়ার কারণে চিত্রনায়কা মাহিয়া মাহিসহ ৩১ জন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর সূত্রমতে, প্রত্যক প্রার্থীর কাছ থেকেই ২০ হাজার টাকা করে জামানত নিয়ে রাখে নির্বাচন কমিশন। জামানতের এই টাকা ফিরে পেতে হলে কোনো নির্বাচনী এলাকায় যে পরিমাণ ভোট পড়ে তার সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট প্রার্থীকে পেতে হয়। তবে রাজশাহীর মোট ৪২ প্রার্থীর মধ্যে ৩১ জনই সাড়ে ১২ শতাংশ করে ভোট পাননি।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ঢাকা সিনেমার চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিও জামানত হারিয়েছেন। এই আসনে মোট ভোট পড়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৯৩টি। জামানত ফিরে পেতে হলে প্রার্থীকে ২৭ হাজার ৪৭৫টি ভোট পেতে হতো। তবে মাহি পেয়েছেন ৯ হাজার ৯টি ভোট। ফলে তিনি জামানত ফিরে পাবেন না। এ আসনে শুধু নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী জামানত ফেরত পাবেন। এ আসনে বেসরকারিভাবে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী।
এ আসনে মাহিয়া মাহি ছাড়াও জামানত ফিরে পাবেন না এনপিপির নুরুন্নেসা, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বশির আহমেদ, বিএনএফের আল সাআদ, তৃণমূল বিএনপির জামাল খান দুদু, বিএনএমের মো. শামসুজ্জোহা, জাতীয় পার্টির মো. শামসুদ্দীন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সহধর্মিনী আয়েশা আখতার জাহান ডালিয়া ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আখতারুজ্জামান।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে ভোট দিয়েছেন ৯৩ হাজার ৪৪৩ জন ভোটার। জামানত রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন ১১ হাজার ৬৮১টি ভোট। আসনের পাঁচজন প্রার্থী তা পাননি। তাই জামানত হারাচ্ছেন জাসদের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ইয়াসির আলিফ বিন হাবিব, বিএনএমের কামরুল হাসান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মারুফ শাহরিয়ার ও জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন। ৩১ হাজার ৪৬০ ভোট পেয়ে জামানত রক্ষা করেছেন নৌকার প্রার্থী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ৫৫ হাজার ১৫৬ ভোট পেয়ে এখানে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় একচেটিয়া ভোট পেয়েছেন নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি ছাড়া এ আসনের অন্য ৫ প্রার্থীই জামানত হারিয়েছেন। আসনটিতে মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫৩৪টি। আসাদ একাই পেয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০৯টি ভোট। ফলে জামানত হারাচ্ছেন বিএনএমের ভাইস চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি, জাতীয় পার্টির আব্দুস সালাম খান, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের এনামুল হক, বিএনএফের বজলুর রহমান ও এনপিপির সইবুর রহমান। জামানত রক্ষা করতে হলে তাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন ছিল ২১ হাজার ৬৯১ ভোট।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৭৯টি। এখানে জামানত রক্ষার জন্য প্রয়োজন ছিল ২১ হাজার ৬০ ভোট। এখানে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বিরাট ব্যবধানে হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান এমপি এনামুল হককে। অন্য সবাই জামানত হারিয়েছেন। জামানত হারানো চারজন হলেন- এনপিপির জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, জাতীয় পার্টির আবু তালেব প্রামানিক, বিএনএমের সাইফুল ইসলাম রায়হান ও স্বতন্ত্র বাবুল হোসেন।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪৯টি। জামানত রক্ষায় প্রার্থীদের প্রয়োজন ছিল ২২ হাজার ২১৯ ভোট। তবে জাতীয় পার্টির আবুল হোসেন, সুপ্রিম পার্টির আলতাফ হোসেন মোল্লা, বিএনএমের শরিফুল ইসলাম ও গণফ্রন্টের মখলেসুর রহমান তা পাননি। ফলে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে। এখানে ৩ হাজার ৫১ ভোটে স্বতন্ত্র ওবায়দুর রহমানকে হারিয়ে এমপি হয়েছেন নৌকার প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ দারা।
রাজশাহী-৬ আসনের শামসুদ্দীন রিন্টু ও রাজশাহী-১ আসনের আখতারুজ্জামান প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারপরও দুজনের ব্যালটে কিছু ভোট পড়েছে। তবে এই ৩১ প্রার্থীই সামান্য কিছু ভোট পেয়েছেন।
রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘জামানত ফেরত পেতে হলে মোট প্রদত্ত ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট প্রার্থীকে পেতে হয়। রাজশাহীতে যারা এই পরিমাণ ভোট পাননি, তাদের জামানত নির্বাচন কমিশন বাজেয়াপ্ত করবে। অন্যরা ফেরত পাবেন।’
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ