ঢাকা, সোমবার, ১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ জিলহজ ১৪৪৫

কক্সবাজারে একটিতে চমক, তিন আসনে জয়ী নৌকা

প্রকাশনার সময়: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩২

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজারের চারটি আসনের মধ্যে একটিতে কল্যাণ পার্টির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। অন্য তিনটি আসনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা।

রোববার (৭ জানুয়ারি) রাতে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বেসরকারিভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

কক্সবাজার-১ এ ইব্রাহিমের জয়:

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের কাছে হেরে গেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য জাফর আলম।

জেলা রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, নানা উত্তাপ ছড়ালেও কোনোধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের নির্বাচন। তবে পৃথক পৃথক অভিযোগের কারণে চরনদীপ ভূমিহীন প্রাইমারি স্কুল, দক্ষিণ ফুলছুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মরংগুনা অসুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে। এই তিন কেন্দ্রের ফলাফল ছাড়াই এই আসনে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান তথা হাতঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ৮১.৯৫৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তথা ট্রাক প্রতীকের জাফর আলম পেয়েছেন ৫২.৮৯৬ ভোট।

এদিকে ভোট শেষ হওয়ার ৫০ মিনিট আগে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন সংসদ সদস্য ও কক্সবাজার-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম।

ইব্রাহিম বলেন, ‘চকরিয়া ও পেকুয়ার মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিলেন। আমি এখানকার নেতা কর্মীদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। সাধারণ ভোটার সন্ত্রাস, মাদক ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন।’

কক্সবাজার-২ এ আশেকের হ্যাটট্রিক: ২০১৪ ও ২০১৮ এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবারও তৃতীয়বারের মতো মহেশখালি কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক। ৯৭ হাজার ৪৭৬ ভোট পেয়ে তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

মহেশখালি ও কুতুবদিয়ার উপজেলা প্রশাসন এবং ভোটারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, কোনোধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই কক্সবাজার-২ আসনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। এতে ৩৯.৪ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। রাতেই বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এ ফলাফলে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক। তিনি ৬২ হাজার ৯৮০ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নোঙ্গর প্রতীকের (বিএনএম) মুহাম্মদ শরীফ বাদশা পেয়েছে ৩৪ হাজার ৪৯৬ ভোট। ঘোষিত ফল অনুযায়ী অন্য প্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মুহাম্মদ ইউনুছ (মিনার) ২২৯ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী মাহাবুবুল আলম (আম) ১১৬ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান (চেয়ার) ১৬১ ভোট ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী মো. খাইরুল আমিন (একতারা) ১১৭ ভোট পেয়েছেন। তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

আশেক বলেন, ‘উন্নয়নবঞ্চিত মহেশখালী-কুতুবদিয়াবাসী করোনা মহামারিতে কাউকে পায়নি। আমি পাশে ছিলাম। সমাজসেবামূলক কাজ, দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ মনোবল আমাকে জয়ী করেছে। আমি নেত্রীর কাছে, দলের জ্যেষ্ঠ ও তরুণ নেতাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’

কক্সবাজার-৩ এ কমলের হ্যাট্রিক: কক্সবাজার-৩ আসন থেকে একটানা তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়ে হ্যাটট্রিক জয় করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল।

কক্সবাজার সদর-রামু-ঈদগাঁও উপজেলা নিয়ে কক্সবাজার-৩ আসন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত (নৌকা) সাইমুম সরওয়ার কমলের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। তবে অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করে নেন তিনি। এই আসনে ১৭৬টি কেন্দ্রে নৌকার প্রাপ্ত ভোট ১৬৭০২৯ এবং ঈগলের প্রাপ্ত ভোট ২১৯৪৬। দুই উপজেলায় মোট ভোটার ৪৮৯৬১০। মোট ফলাফলে ১৪৫০৮৩ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন নৌকা প্রতীকের সাইমুম সরওয়ার কমল। আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হলে কক্সবাজার-৩ আসন থেকে টানা তিন মেয়াদের সংসদ সদস্য হয়ে হ্যাটট্রিক করবেন এই সংসদ সদস্য। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী থেকে হারলেও দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

কমল বলেন, ‘আমি মানুষকে ভালোবাসি। তাই মানুষও আমাকে ভালোবেসে তিনবার ভোট দিয়ে এমপি বানিয়েছে। গত ১০ বছরে কক্সবাজার সদর, রামু ও ঈদগাঁও উপজেলায় সংগঠনের তৃণমূলকে ঢেলে সাজিয়েছি। এলাকার উন্নয়ন করেছি। জনগণ তাই এবারও আমাকে নিরঙ্কুশভাবে ভোট দিয়েছে।’

বদি ম্যাজিকে দ্বিতীয়বার শাহীন বিজয়ী: স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ম্যাজিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ আসনে ১ লাখ ২২ হাজার ৮০ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহীন আক্তার। রোববার রাতে উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার স্ব-স্ব সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

উখিয়া উপজেলা সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহীন আক্তার পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৬৪ ভোট ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশর পেয়েছেন ১০ হাজার ৬৯ ভোট। ডাব ১১৫, মিনার ৫৫০, সোনালি আঁশ ১৬৯, আম ১৭৯, লাঙ্গল ১ হাজার ২৬৪ ভোট।

অপরদিকে, টেকনাফ উপজেলা সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, নৌকা প্রার্থী শাহীন আক্তার পেয়েছেন ৬১ হাজার ৬১৬ ভোট ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশর ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ২১ হাজার ৬৩৮ ভোট। ডাব ১৩২, মিনার ২৭৫, সোনালি আঁশ ৭৭, আম ১৪৮, লাঙ্গল ৪৯৪ ভোট। প্রাপ্ত ফলাফল মতে, ৯০ হাজার ৩৭৩ ভোট বেশি পেয়ে শাহীন আক্তার বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

এদিকে ভোট চলাকালীন দুপুরে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে লাঙ্গল প্রতীকের নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো, এরপরে বিকেলে স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঈগল প্রতীকের নুরুল বশর ভোট বর্জন করেন।

শাহীনা আক্তার বলেন, ‘তৃণমূলের কর্মীরা আমার মতো তৃণমূলের লোককে ভোট দিয়েছেন।’

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ