দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের কেন্দ্র দখল ও প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার অভিযোগ এনে কক্সবাজার-৩ আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাইকোর্টের আওয়ামী আইনজীবী ফোরামের নেতা ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ ও ৪ আসনের জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নুরুল আমিন সিকদার ভূট্টো ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার (৭ জানুয়ারি) বেলা ২টার দিকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফিং করে এ ঘোষণা দেন মিজান সাঈদ। এর আগে ভোট স্থগিত চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করেছেন।
আবেদনে তিনি, অনিয়ম, ভোট জালিয়াতি ও কারচুপির কারণে ২৯৬, (কক্সবাজার-৩) আসনের চলমান নির্বাচন স্থগিত করে পুনঃনির্বাচনের দাবি করেন। তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, এ আসনের ১৬৭ কেন্দ্রেই অনিয়ম করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, সকাল ৮টা হতে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও আমার নির্বাচনি এলাকা ২৯৬ (কক্সবাজার-৩) আসনে কক্সবাজার সদর, রামু, ঈদগাঁও উপজেলার সিংহভাগ কেন্দ্রে আমার নির্বাচনি এজেন্টদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। অন্যান্য কেন্দ্রসমূহের মধ্যে যারা প্রবেশ করেছিল তাদের নৌকার প্রার্থীর পেটুয়া বাহিনী জোরপূর্বক বের করে দেয়। সেইসাথে আমার সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। মৃত ও প্রবাসীদের ভোট জাল করে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন বিজিবি এবং নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য সংস্থার লোকদের তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগ করা সত্ত্বেও তাদের বিন্দু পরিমাণ সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, ইসলামপুর নাপিতখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পূর্ব নাপিতখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসলামপুর উত্তর খান ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খোদাইবাড়ী ওয়াহেদরপাড়া আছদ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুনিয়াপালংয়ের গোয়ালিয়া পালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধেচুয়া পালং উচ্চ বিদ্যালয়সহ আরো অসংখ্য কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতি হয়েছে।
পরবর্তীতে এ অভিযোগগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসার ও ইউএনওসহ জেলা প্রশাসনকে অবহিত করি। তবে এ বিষয়ে আমি তাদের কাছ থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা পাইনি। লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন, ১৬৭ কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ সম্ভব হয়নি। এরপরও অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানান, কোথাও কেন্দ্র দখলের তথ্য দুপুর ২টা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। পুলিশ সার্বক্ষিণ দায়িত্ব পালন করছেন।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনে ভোটার রয়েছেন চার লাখ ৮৯ হাজার ৬১০ জন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৬৭টি। এর মধ্যে রামুতে ৬৪টি, কক্সবাজার সদরে ৭৬টি ও নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি ভোটকেন্দ্র।
এ আসনের জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেকও (লাঙ্গল) বলেছেন, নৌকা প্রতীকের পক্ষে রামু উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে নানা প্রভাব বিস্তারের তথ্য রয়েছে। কিছু কেন্দ্র দখলের খবর পেয়েছি। বিষয়টি প্রশাসনকে দ্রুত নজর দেয়ার দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন (হাতঘড়ি) বলেন, আমি ভোটের মাঠে রয়েছি। বিভিন্ন কেন্দ্রে এজেন্ট বের করে দেয়া হচ্ছে। কিছু কর্মীদের মারধরও করা হচ্ছে। প্রভাব বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অন্যদিকে ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র থেকে এজেন্টের বের করে দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া- টেকনাফ) আসনের জাতীয় পার্টি মনোনীত নাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টোর ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। ভোটগ্রহণের দিন বেলা ১টার দিকে উখিয়ায় তার নিজ অফিসে কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের ব্রিফিং করে তিনি এ ঘোষণা দেন।
তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ চলছিল। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করেন। পরে বেলা ১১টার দিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা আমাদের লাঙ্গল প্রতীকের এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন। ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা সৃষ্টি করে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উখিয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফলিয়া পাড়া কেন্দ্র দুটি আমার নিজ ইউনিয়নে পড়ছে। তারা এসব কেন্দ্রে ঝামেলা শুরু করার পর অন্যান্য কেন্দ্রেও এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন। পরবর্তীতে এ অভিযোগগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার ও ইউএনওসহ জেলা প্রশাসনকে অবহিত করি। তবে এ বিষয়ে আমি তাদের কাছ থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা পাইনি। তবে নির্বাচন কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানকে ফোন করা হয়। রিং হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা মোট ভোটার ৩২৬,৯৭১ জন, পুরুষ ভোটার ১৬৭,১৪০ জন ও নারী ভোটার ১৫৯,৮২৯ জন। আর মোট কেন্দ্র ১০৪টি।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ