নড়াইলের কালিয়ায় মানব পাচার মামলা তুলে নিতে প্রধান আসামি মো. শাকিল হোসেন (৩৭) প্রায় এক মাস কারাভোগ করে জামিনে এসে এবং পলাতক আসামি রাজিবুল ইসলাম রাজিব উভয়েই বাদীকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হুমকির কারণে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ভুক্তভোগী বাদী ও তার পরিবার।
মামলার বাদী খাজা শেখ শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে কালিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। হুমকির বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, জেলার কালিয়া উপজেলার কদমতলা গ্রামের খাজা মিয়া শেখ তার মেয়ে মিতা খানমকে ফ্রান্সে নেয়ার কথা বলে ভারতে নিয়ে পাচারের অভিযোগে গত ৬ ডিসেম্বর ঘটনাস্থল খুলনা জেলার হরিণটানা থানায় মো. শাকিল হোসেন, রাজিবুল ইসলাম রাজিব, রাকিবুল ইসলাম রাতুল, মমিনুল ইসলাম সাগর ও পিয়ারী বেগম নামের ৫ আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তাদের মধ্যে মূলহোতা উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামের মৃত ছাব্বির রহমান ওরফে মনু মোল্যার ছেলে আসামি শাকিল হোসেনকে গত ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে হরিণটানা থানার এসআই মো. রফিকুল ইসলাম সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স নিয়ে কালিয়া থানা পুলিশের সহায়তায় গ্রেফতার করে। এরপর গত ৯ ডিসেম্বর আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হরিণটানা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রফিকুল ইসলাম। একই দিন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে জামিন আবেদন করলে শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।
গত ১২ ডিসেম্বর খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৪ এর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আহম্মেদ একাধিক মানব পাচার মামলার প্রধান আসামি এ চক্রের মূলহোতা শাকিলের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর গত ২৭ ডিসেম্বর শাকিল জামিনে ছাড়া পান। এজাহারভুক্ত ৫ জন আসামির মধ্যে মো. শাকিল হোসেন ছাড়া আর কাউকে গত এক মাসে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।
জামিনে মুক্ত হয়েই প্রধান আসামি মো. শাকিল হোসেনের নেতৃত্বে আরও কয়েকজন মামলা তুলে নিতে বাদী ও তার পরিবারের লোকজনকে চাপ দিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপজেলার চাঁচুড়ী বাজারের (বাদী ও বিবাদীদের স্থায়ী এলাকা) পূর্ণেন্দ্রনাথ সাহার ওষুধের দোকানের সামনে থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি মামলার বাদী খাজা শেখকে বাজারের মারকাস মসজিদের দক্ষিণ পাশের অন্ধকার নির্জন ফাঁকা স্থানে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে উপস্থিত হলেই মামলার প্রধান আসামি মো. শাকিল হোসেন ও তার অন্যতম সহযোগী এজাহারভুক্ত আরেক আসামি রাজিবুল ইসলাম রাজিব বাদী খাজা শেখের জামার কলার ধরে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেন। তারা আরও হুমকি দেন, শিগগিরই মামলা তুলে না নিলে তাকে (বাদীকে) কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, ওই আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তারা সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা একে অপরের যোগসাজশে গ্রামের সহজ-সরল নিরীহ অসংখ্য সুন্দরী নারীসহ বিভিন্ন মানুষদের উচ্চ বেতনে বিদেশ নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নগদ টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করে ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিক্রি করে দেয়। আসামিদের বিরুদ্ধে মানব পাচারসহ একাধিক ফৌজদারী মামলা চলমান রয়েছে।
কালিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রতনুজ্জামান বলেন, একটি মানব পাচার মামলার বাদীকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে থানায় জিডি হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ