জুমার নামাজ আদায়ের পর মসজিদে দাঁড়িয়ে মুসল্লিদের কাছে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া ও টেকনাফ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহিনা আক্তারের পক্ষে নৌকায় ভোট চেয়ে প্রচারণা চালানোর অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে ভোট না দিলেও নৌকা জয়ী হবেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এ ধরনের একটি অডিও রের্কড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) উখিয়া উপজেলার জালিয়া পালং দিঘীর বিল জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটেছে।
ওই মসজিদের জুমার নামাজে অংশগ্রহণ করে কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের সহকারী হিসাব রক্ষক সানাউল্লাহ এই প্রচারণা চালান। বিষয়টি বিধিবহির্ভূত বলছেন সরকারি কর্মকর্তা।
জানা যায়, ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য সানাউল্লাহকে কক্সবাজার শহরের লাইট হাউস দারুল উলুম মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি নির্বাচন কমিশন আয়োজিত নির্বাচনি প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৪ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ডে তাকে বলতে শুনা যায়, আপনারা নৌকায় ভোট দিলেও নৌকা জিতবে; না দিলেও নৌকা জিতবে। নৌকার প্রার্থীর পক্ষ থেকে আমাদের এই মাদরাসার জন্য ৫ লাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরাও তাদের বেশি করে ভোট দেবো বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
ক্ষেত্র বিশেষে শুকরের মাংস খাওয়া হালাল দাবি করে তিনি আরোও বলেন, এলাকার ছেলেদের মামলা-মোকদ্দমা থেকে বাঁচাতে শুকরের খাচ্ছি মনে করে নৌকায় ভোট দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি।
ভোটগ্রহণে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্য প্রণীত বিধিমালা অনুযায়ী, প্রিজাইডিং অফিসারসহ কোনো অফিসার কোনো প্রার্থীর প্রভাবে প্রভাবিত হতে না পারে অথবা পক্ষপাতমূলক আচরণের সুযোগ না পান অথবা কারো বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি না হয়, সেসব বিষয় বিবেচনা করে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক প্রিজাইডিং অফিসারসহ অন্যান্য ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগদান করার পরও কেউ কোনো প্রার্থীর পক্ষে পক্ষপাতমূলক প্রচারণায় অংশগ্রহণ করলে তার নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
মসজিদে নৌকা প্রতীকের প্রচারণা করার সত্যতা স্বীকার করে সানাউল্লাহ বলেন, আমি ওই মাতসার সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। নৌকার প্রার্থী সেখানে ৫ লাখ টাকার দিয়েছেন, তাই তাদের দিকে একটু খেয়াল রাখতে বলেছি মাত্র।
সরকারি কর্মকর্তা হয়ে এভাবে কোনো প্রার্থীর প্রচারণা চালাতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি দাম্ভিকতার সাথে বলেন, সরকারি চাকরিবিধির নিয়মনীতি ভালো করেই জানা আছে আমার। আপনার যা ইচ্ছে তা লিখেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জুমার নামাজে অংশ নেয়া কয়েকজন বলেন, মুসল্লি হিসেবে নামাজ পড়তে আসেন সানাউল্লাহ। কিন্তু এখানে তিনি নামাজ শেষে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিয়ে মুসল্লিদের মাঝে নির্বাচনি প্রচারণা চালাবেন, এটা ভাবতে পারি নাই। এটা মোটেও ঠিক হয়নি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এটি করেছেন। এতে মুসল্লিসহ স্থানীয়দের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। আল্লাহর ঘরে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার কোন সুযোগ নেই।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোনো দলের পক্ষে ভোট চাইতে পারে না। এরকম যদি কোনো দলের পক্ষে ভোট চেয়ে থাকে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ