আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-৬ আসনে নৌকা ও ট্রাক প্রতীকের মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন ভোটাররা। তবে একসময়ের অশান্ত এই জনপদে শান্তির সুবাতাস বহমান রাখতে নৌকার প্রতি আস্থা বেড়েছে শান্তিনগরীর মানুষের।
নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসন। বড় ধরনের নির্বাচনি সহিংসতা ছাড়াই শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শেষ হয়েছে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার সকল কার্যক্রম।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শাসনামলে এই আসনে দেশ ও দেশের বাহিরে সর্বহারা নামক সন্ত্রাসী বাহিনী ও জেএমবি নামক আরেক সন্ত্রাসী বাহিনীর কর্মকাণ্ডে রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার থেকে সেই অশান্ত জনপদে বইতে শুরু করে শান্তির সুবাতাস। সেই শান্তির সুবাতাস অব্যাহত রাখতে, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা পেতে নৌকা প্রতীকের প্রতি শান্তিনগরীর মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপজেলার ত্রিমোহনী বাজার এলাকার ভ্যানচালক রহিম উদ্দিন বলেন, গত ২০২০ সালে উপনির্বাচনে হেলাল ভাই এমপি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আর আমাকে কোনো মোড়ে চাঁদা দিতে হচ্ছে না। এর আগে প্রায় প্রতিটি মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন সমিতিতে ৫-১০টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। এতে করে দিনে প্রায় ১০০টাকা চাঁদা দিতেই শেষ হতো। তাই আবারো হেলাল ভাইকে এমপি হিসেবে নির্বাচিত করতে চাই।
উপজেলার লোহাচড়া গ্রামের ভটভটি চালক আসলাম হোসেন বলেন, হেলাল ভাই এমপি হওয়ার আগে উপজেলার রেলগেইট, উপজেলা বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন মোড়ে প্রতিটি ভটভটিচালককে প্রতিদিন ১০-২০টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। এখন কোনো চাঁদা দিতে হয় না। শুধু ভটভটিই নয় বর্তমানে কোনো অটোচালক, সিএনজি চালকসহ কোনো চালককে এখন আর চাঁদা দিতে হয় না। তাই আবারো আমরা হেলাল ভাইকে এমপি হিসেবে চাই।
নৌকার মাঝি ও বর্তমান এমপি আলহাজ মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, উপনির্বাচনে আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরই ভ্যান, অটোচার্জার, ভটভটি ও সিএনজি চালকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সমিতির নামে চাঁদা আদায় বন্ধ করেছি, প্রতিটি এলাকা থেকে আতিনেতা-পাতিনেতাদের বিভিন্ন কাজের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা আদায় বন্ধ করেছি। দখলবাজি বন্ধ করেছি। এখন আর কাউকে বিদ্যুতের লাইন নিতে কোনো দালালকে হাজার হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় না। বিভিন্ন অফিস-আদালতে নেতাদের দৌরাত্ম বন্ধ করেছি। এখন আর কাউকে একটি চাকরির জন্য ১০ জনকে টাকা দিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে হয় না।
তিনি আরও বলেন, আমি প্রতিটি এলাকা থেকে দালালদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করেছি। আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর অনেক চেষ্টা বিনিময়ে দীর্ঘদিন খানাখন্দকে পড়ে থাকা রাণীনগর-আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ সড়কের ২২ কিমি. জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটির পাঁকাকরণের কাজ সম্পন্ন করেছি। এতে ওই অঞ্চলের মানুষরা উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হয়েছেন। প্রতিটি গ্রামের গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি।
আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা বিগত সময়ের এমপি ও তাদের লোকজনের দ্বারা নানাভাবে অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হয়েছি। সেই প্রেক্ষাপটে এমপি হওয়ার পর কাউকে প্রতিহিংসামূলক হয়রানি করিনি। আমি এখন পর্যন্ত দুই উপজেলার কোনো মানুষের শরীর থেকে একফোটা রক্ত ঝরতে দিইনি। আমি চেষ্টা করেছি শেখ হাসিনার প্রতিটি সেবা দুই উপজেলার প্রতিটি মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে। তবে কতটুকু সফল হয়েছি তা এই অঞ্চলের মানুষরা বলতে পারবেন। তাই আমি শতভাগ বিশ্বাস করি শান্তিনগরীর এই শান্ত পরিবেশ ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এই অঞ্চলের মানুষ আগামী ৭ জানুয়ারি আমাকে নয় শান্তি ও উন্নয়নের প্রতীক নৌকাতেই ভোট দিবেন এবং আবারো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করবেন।
এই আসনে নির্বাচনি মাঠে সরব দেখা গেছে, নৌকার মাঝি ও বর্তমান এমপি আলহাজ মো. আনোয়ার হোসেন হেলালকে, ট্রাক প্রতীক জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাড. ওমর ফারুক সুমনকে ও কাঁচি প্রতীক নিয়ে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নওশের আলীকে।
এ ছাড়া লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু বেলাল হোসেন জুয়েল, সোনালী আঁশ প্রতিক নিয়ে তৃণমূল বিএনপি’র প্রার্থী পি কে আব্দুর রব, ডাব প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ কংগ্রেস এর প্রার্থী সরদার মো. আব্দুস সাত্তার, আম প্রতিক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পাটি (এনপিপি) প্রার্থী খন্দকার ইন্তেখাব আলম ও ঈগল প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম নামে মাত্র নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন।
দুই উপজেলার মোট ভোটার ৩১৯৩৩৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১৬১০৭৭ জন, নারী ১৫৮২৭১ জন এবং হিজড়া ২জন।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ