চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ের আভাস
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা নির্বাচনী জনসভা, গণসংযোগ, পথসভা, উঠান বৈঠকে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রচার-প্রচারণা আর পোষ্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এই নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। অনেক প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামের পাদপীঠ, নদ-নদী, কৃষি সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত জেলা চুয়াডাঙ্গা।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসন সদর উপজেলার তিতুদহ, বেগমপুর, নবগঠিত গড়াইটুপি ও নেহালপুর বাদে ৬ টি এবং আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৫ টি নিয়ে গঠিত। এই আসনের নৌকা এবং ঈগলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে নৌকাসহ মোট ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনবারের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন (নৌকা), জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইদ্রিস চৌধুরী (আম) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিআইপি বিশিষ্ট শিল্পপতি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা (ঈগল), আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মাইওয়ান মিনিষ্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান সিআইপি বিশিষ্ট শিল্পপতি এমএ রাজ্জাক খান রাজ (ফ্রিজ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক নৌ কমান্ডার এম.শহীদুর রহমান (ট্রাক)।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগের অবস্থান অনেক শক্তিশালী। ২০০৮ সাল থেকেই এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। এ আসনে টানা ৩ বারের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। তিনি এবারও আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু এবার তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিআইপি বিশিষ্ট শিল্পপতি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। তিনি এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। দল তাকে মনোয়ন না দেয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রাথী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
একইভাবে মনোনয়ন চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মাইওয়ান মিনিষ্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি সিআইপি এমএ রাজ্জাক খান রাজ। মনোনয়ন না পেয়ে তিনিও স্বতন্ত্র প্রাথী হয়েছেন।
সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনকে এমপি পদে বিজয়ী করতে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে করছেন মতবিনিময়, জনসংযোগ, উঠান বৈঠক,পথসভা। জনগণের সামনে তুলে ধরছেন সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। অন্যান্য প্রার্থীরাও একইভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে।
এদিকে, সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন, নৌকার বিরুদ্ধে ঈগল প্রার্থী যে জোট বেধেছেন, এই জোট যদি ৭ জানুয়ারী পর্যন্ত ঠিক থাকে তাহলে নৌকা আর ঈগলের মধ্যে তুমুল লড়াই হবে।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮০ জন। এখানে পুরুষ ২ লাখ ৪১ হাজার ৩৮৭ জন এবং মহিলা ২ লাখ ৪২ হাজার ৫৮৯ জন।
দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের ভারত সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গা-২ আসন। এ আসনে সদর উপজেলার ৪ টি, দামুড়হুদা উপজেলার ৮ টি এবং জীবননগর উপজেলার ৮টি নিয়ে গঠিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ৮ জন প্রাথী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাজী আলী আজগার টগর (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী রবিউল ইসলাম (লাঙ্গল), এনপিপির ইদ্রিস চৌধুরী (আম), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) দেওয়ান মোহাম্মদ ইয়াসিন উল্লাহ (মশাল), জাকের পার্টির আব্দুল লতিফ খান যুবরাজ (গোলাপ ফুল), স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ- কমিটির সদস্য আবু হাশেম রেজা (ট্রাক), স্বতন্ত্র প্রার্থী ঢাকাস্থ চুয়াডাঙ্গা জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাবেক এমপি মির্জা সুলতান রাজার ছোট ভাই মির্জা শাহরিয়ার মাহমুদ লন্টু (ঢেঁকি) ও স্বতন্ত প্রার্থী দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক নূর হাকিম (ঈগল)।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ আসনের দুটি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বহুধা বিভক্তিতে রয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান তুলনামূলকভাবে অনেকটা মজবুত হলেও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও নেতৃত্ব নিয়ে বহুধা বিভক্তির কারণে সাংগঠনিক অবস্থান সে তুলনায় অনেকটাই দুর্বল।
২০০৮ থেকে চলতি সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত টানা ৩ দফায় সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাজী আলী আজগার টগর। তিনি এবারও আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, দল ও দলের দায়িত্বশীল নেতাকর্মীদের
সাথে তার কোনো সমন্বয় নেই। শুধু তাই নয়-তিনি দুই উপজেলারই দায়িত্বশীল নেতাদের পাশ কাটিয়ে নিজের অনুসারী বিশেষ কুঠুরীর নেতাকর্মীদের নিয়ে করেছেন মাঠ পর্যায়ে কাজকর্ম। যে কারণে দুটি উপজেলাতেই এমপি ও এমপি বিরোধী গ্রুপের প্রকাশ্য অবস্থান রয়েছে। আর সেক্ষেত্রে
এমপি বিরোধী গ্রুপের অবস্থানই মজবুত। সরকারের চলতি মেয়াদে এ আসনে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ এবং স্কুল-কলেজ, মাদরাসার অবকাঠামো উন্নয়নসহ কৃষিখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। এ ছাড়াও জীবননগরের দৌলৎগঞ্জ ও দামুড়হুদার দর্শনায় দু’টি শুল্ক স্টেশনকে
বন্দরে রূপান্তরিত করার কাজ চলছে।এ আসনে টানা ৩ বারের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাজী আলী আজগার টগর। তিনি এবারও আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। এবার তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হাশেম রেজা। তিনি এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। দল তাকে মনোয়ন না দেয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রাথী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একইভাবে মনোনয়ন চেয়েছিলেন ঢাকাস্থ চুয়াডাঙ্গা জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাবেক এমপি মির্জা সুলতান রাজার ছোট ভাই মির্জা শাহরিয়ার মাহমুদ লন্টু ও দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক নূর হাকিম। মনোনয়ন না পেয়ে তারাও স্বতন্ত্র প্রাথী হয়েছেন।
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নৌকার বিজয় হলে ওই সুবিধা ভোগীরাই আবার সকল সুবিধা ভোগ করবে। তবে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ত্রিমুখি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮জন। এখানে পুরুষ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪০২ এবং মহিলা ২ লাখ ৩১ হাজার ৬৯২ জন।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ