সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটি আসনে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে। ভোট উৎসব জমে উঠা এসব আসনের ১৭৪ জন সরকারি—আধা সরকারি কর্মকর্তাকে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে না রাখার জন্য আবেদন করবেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
শনিবার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় এই তথ্য জানান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা জানান, সরকারি ও আধাসরকারি এসব কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছেন একজন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (এসিল্যাণ্ড), একজন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ স্কুল—কলেজের শিক্ষকগণই বেশি রয়েছেন।
সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাড. রনজিত সরকার বললেন, নির্বাচনি এলাকার চার উপজেলার ৪০ জন প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারকে নির্বাচনি দায়িত্বে না রাখার জন্য অনুরোধ জানাবেন তিনি। দুয়েকদিনের মধ্যেই তার পক্ষ থেকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে এই বিষয়ে আবেদন জানানো হবে।
তিনি জানান, একজন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচারে সক্রিয় আছেন এসব কর্মকর্তারা। ওই প্রার্থীর প্রতি দুর্বলতা আছে তাদের।
এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন জানালেন, চার উপজেলার ২০ জন প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারকে নির্বাচনি ডিউটিতে না রাখার জন্য অনুরোধ জানাবেন তিনি। কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তারও পক্ষপাতমূলক আচরণ আছে বলে দাবি এই প্রার্থীর।
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই—শাল্লা) আসনের দিরাই উপজেলার অ্যাসিল্যান্ড জনি রায়সহ ৪০ জন প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারকে নির্বাচনি দায়িত্ব না দেবার অনুরোধ জানাবেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ (আল-আমিন চৌধুরী)। আল-আমিন চৌধুরী জানান, তিনি শনিবারের মধ্যেই রিটার্নি কর্মকর্তার নিকট এই আবেদন জানাবেন।
আল-আমিন চৌধুরী বললেন, এসব কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই স্কুল-কলেজের শিক্ষক। তারা একজন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তাদেরকে ভোট কর্মীর দায়িত্ব দিলে পক্ষপাতিত্ব হতে পারে।
এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সুরঞ্জিত পত্নি বর্তমান সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তাও দুই উপজেলা মিলে ১৫ জন নির্বাচনি কর্মকর্তাকে ভোট কর্মীর দায়িত্ব না দেবার জন্য অনুরোধ জানাবেন।
জয়া সেন বললেন, শাল্লায় ৫ জন এবং দিরাইয়ে ১০ জন ভোট কর্মকর্তা, যারা এক প্রার্থীর পক্ষে কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা ভোট গ্রহণ কাজে যুক্ত হলে পক্ষপাতিত্ব হতে পারে। জয়া সেন ইতোপূর্বে দিরাই থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী’র ইতিপূর্বে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনে আবেদন জানিয়েছেন।
জয়া সেন এর সমর্থক শাল্লার প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. অবনী মোহন দাস বললেন, পাঁচ জন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তার নাম ইতোমধ্যে উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন তারা।
সুনামগঞ্জ—৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় চার জন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাকে দায়িত্বে না রাখার জন্য জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জ সদরের একজন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকেও ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তার দায়িত্বে না রাখার জন্য এক প্রার্থীর পক্ষে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সুনামগঞ্জ—৫ (ছাতক—দোয়ারাবাজার) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম চৌধুরী জানালেন, নির্বাচনি এলাকার দুই উপজেলার ৪০ জন কর্মকর্তাকে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে না রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করবেন তিনি। এই আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ফোন রিসিভ না করায় এই বিষয়ে তার কোন আপত্তি থাকবে কী—না জানা যায় নি।
বেসরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি শুভঙ্কর তালুকদার মান্না বললেন, এমপিভুক্ত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তবে নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পাওয়া কোন শিক্ষক কর্মচারীরা কোন প্রার্থীর পক্ষে ভোটের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। তারা যেহেতু এই সময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে আছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর যে কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারেন। নির্বাচন কমিশন অভিযোগের সত্যতা পেলে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারবে।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজন কুমার সিংহ বললেন, বিশ্বম্ভরপুরে চারজন ও দিরাই দুজন প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে ভোটের দায়িত্বে না রাখতে আবেদন পেয়েছেন তারা। অন্য কোন আবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। তবে নির্বাচনকে অধিক গ্রহণযোগ্য করতে যে কেউ অভিযোগ অনুযোগ লিখিত বা মৌখিকভাবে দিলেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন তারা।
ভোট গ্রহণের জন্য এই জেলায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কম পাওয়া যায় উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বললেন, তবুও ভোটগ্রহণের তালিকায় ১০ শতাংশ কর্মকর্তার নাম অতিরিক্ত রাখা হয়েছে। কোন অভিযোগ আসলে, অতিরিক্ত তালিকা কাজে লাগানো হবে।
প্রসঙ্গত: সুনামগঞ্জ—৩ (জগন্নাথপুর—শান্তিগঞ্জ) আসনে ভোটের উত্তেজনা অন্য আসনের চাইতে কম। এই আসনে বর্তমান হেভিওয়েট প্রার্থী পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নানের সঙ্গে লড়ছেন তৃণমূল বিএনপির শাহীনুর পাশা চৌধুরী।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ