ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
দুটো কিডনি নষ্ট

বাঁচতে চান মুক্তি, সহযোগীতার আবেদন

প্রকাশনার সময়: ২৫ জুন ২০২১, ২০:২২

তিন সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন ৫০ বছর বয়সী এই রেমিট্যান্স যোদ্ধা (বিদেশ ফেরত) ইমরান পাইক মুক্তির দুটো কিডনিই নষ্ট। বর্তমানে অর্থাভাবে তার চিকিৎসাও বন্ধ।

এ পর্যন্ত ৬ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেও সুস্থ্য হতে পারেননি। এখন টাকার অভাবে ডায়ালাইসিসও বন্ধ তার। এই অবস্থায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও বাগেরহাট-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়সহ বিত্তবানদের সহযোগিতা চাচ্ছেন ইমরান।

বাগেরহাট পৌরশহরের পূর্ববাসাবাটি এলাকার আব্দুল হামেদ পাইকের ছেলে ইমরান পাইক মুক্তি। ২০০৮ সালে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধার দেনা করে একটু ভাল থাকার আসায় দুবাই যান ইমরান।

বিধিবাম, ট্যুরিস্ট ভিসা হওয়ায় কিছুদিন পালিয়ে থেকে বাড়িতে ফিরে আসেন। পিতার জমি বিক্রি করে আত্মীয় স্বজনের দেনা পরিশোধ করেন। পিতার জমি বিক্রির টাকায় ২০০৯ সালে আবারও তিন বছরের ভিসায় দুবাই পারি জমান ইমরান পাইক। তিন বছরের বৈধ ভিসায় দুবাই গেলেও দশ বছর কাজ করেন পালিয়ে থেকে। এক পর্যায়ে বৈধ কাগজপত্র তৈরি করে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে আসেন ইমরান পাইক মুক্তি। এসে কিছুদিন থেকে আবারও দুবাই যান তিনি। এবারও ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি মুক্তির। করোনায় কাজবন্ধ থাকায় বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে ভরন পোষণ মিটিয়েছেন নিজের। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর আবারও দেশে ফিরে আসেন ইমরান পাইক মুক্তি।

বাড়িতে পৌঁছানোর তিনদিন পরেই অসুস্থ্য হয়ে পড়েন তিনি। চিকিৎসদের পরামর্শ ও পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে জানতে পারেনে তার দুটো কিডনিই নষ্ট।

বাগেরহাট সদর হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা শেখ আবু নাসের বিষেশায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ্য হতে পারেননি ইমরান পাইক মুক্তি। সর্বশেষ গেল তিনমাস ধরে রাজধানীর মিরপুরস্থ কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসকদের তত্বাবধায়নে রয়েছেন।

প্রতি সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করতে হয় তাকে।

ইমরান পাইক মুক্তি বলেন, ১০-১১ বছর বিদেশে থেকেছি। জীবনে কিছুই করতে পারিনি।করোনাকালে প্রায় একবছর বেকার থেকে বাড়ি এসেই অসুস্থ্য হয়ে পড়েছি। ৬-৭ মাসে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজের, পরিবারের সহায় সম্বল বলতে যাই ছিল সবই শেষ করেছি।

সর্বশেষ বাড়ির দুই কাঠা জমিও বন্ধক রেখে ঋণ এনেছি। প্রতিসপ্তাহে খুলনা আবুনাসের বিষেশায়িত হাসপাতালে দুইবার ডায়ালাইসিস করি। ডায়ালাইসিস, ইনজেকশন, ঔষধ সব মিলিয়ে সপ্তাহে বার তের হাজার টাকা ব্যয় হয়। টাকা জোগার করতে না পাড়ায় গত সপ্তাহে ডায়ালাইসিস করতে পারিনি। তিনটি সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে খুব বিপদে রয়েছি। জানি না আল্লাহ কি করবেন।চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

প্রতিবেশী মনিরা পারভীন বলেন, তিনটি সন্তান নিয়ে ইমরান ও তার স্ত্রী যে কত কষ্টে দিন কাটায় তা না দেখলে বোঝা যায় না। প্রায় দিন ই ঠিক মত খেতে পারে না তারা। করোনার সময় মাঝে মাঝে আমরা যতটুকু পারি সহযোগিতা করি।যদিকোন ধনী মানুষ একটু এই পরিবারটার উপর দয়া করত তাহলে হয়ত পরিবারটি একটু স্বস্তিতে থাকতে পারত।

বাগেরহাট পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউর রহমান মন্টু বলেন, ইমরান পাইক যখন বিদেশে থাকতেন, তখন পারিবারিক অবস্থাও মোটামুটি ভালো ছিল। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ঐ পরিবারটি মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমরা সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করার চেষ্টা করি। কিন্তু তাদের বড় ধরণের সহযোগিতা প্রয়োজন। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে হয়তো আল্লাহর রহমতে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, ইমরান পাইকের বিষয়টি আমি শুনেছি। তার পরিবারকে সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন করতে বলেছি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়মের মধ্যে তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা

ইমরানের স্ত্রী আমেনা আক্তার লাকি বলেন, ‘স্বামীর চিকিৎসার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ করেছি। বাবা, মা, ভাইসহ এমন কোন আত্মীয় নাই যে তাদের কাছ থেকে কম বেশি টাকা ধার করি নেই। আসলে এখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন নিয়মিত স্বামীর ডায়ালাইসিসও করাতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাকার অভাবে বড় ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র ছেলে আসিফ ও ৬ষ্ট শ্রেণির ছাত্রী মেয়ে আবিদা সুলতানার পড়াশুনা তো বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি ৯ মাস বয়সী ছোট মেয়ে আফিফাকেও একটু বাড়তি খাবার খাওয়াতে পারি না। আমার স্বামীকে বাচাঁতে শিশুবাচ্চাদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাগেরহাট-২আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়সহ ধনী মানুষদের দয়া ভিক্ষা চাই। আমার স্বামীকে নিয়ে দুটো ডাল ভাত খেয়ে বাচতে চাই।’ এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মধ্য বয়সী এই নারী।

ইমরান পাইক মুক্তিকে সাহায্য পাঠাতে পারেন ব্যাংক হিসাবে অথবা বিকাশে। ব্যাংক হিসাবের নামঃ এমডি ইমরান পাইক মুক্তি, হিসাব নং-১৫৩০৬, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ, বাগেরহাট শাখা। বিকাশ নং-০১৭২৬-৪৬৪১৭৭

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ