ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সীতাকুণ্ডের অপরাধ জগতের ডন তৌহিদুল 

প্রকাশনার সময়: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:৫৮

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অপরাধ জগতের মুর্তিমান আতঙ্কের আরেক নাম রোড় ডাকাত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের অন্যতম একজন তৌহিদুল ইসলাম। ইয়াবা ব্যবসা থেকে শুরু করে নানা অপরাধ জগতের ডন এই তৌহিদুল। এরই মধ্যে এলাকায় চাঁদাবাজি ও নারী নির্যাতনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসী তৌহিদুলকে এলাকা ছাড়া করে। কিন্তু এর পরও থেমে থাকেনি তার অপরাধ কর্মকাণ্ড। তার অত্যাচার থেকে শিশু থেকে নারী কেউই বাদ যায়নি। খুন ধর্ষণসহ নানা অপরাধ যেন তার নিত্য নৈমিত্তিক কাজ। থাকতেন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায়।

সীতাকুণ্ডসহ কয়েকটি উপজেলায় ডাকাতি-ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অপহরণ, ভূমি দখল ও মদকের কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধ তার ইশারায় (নেতৃত্বে) চলে। তার দলে ২৫-৩০ জন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সদস্য রযেছে বলে জানান স্থানীয়রা।

রোববার সন্ত্রাসী তৌহিদুল প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়ারঢালা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি নুর মোস্তফা বজলকে। তাকে হত্যার আধ ঘণ্টা পর মোবাইলে তার ছেলে তাওসিফ ফেরদৌস তারেককে হুমকি দেয় মেরে ফেলার। ‘তোর বাপের মতন তোরেই খামু।’ দুর্ধর্ষ এই সন্ত্রাসী তৌহিদুল ইসলাম (৩৫) বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের আবুল খায়েরের ছেলে।

পুলিশ জানায়, এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, নারী শ্লীলতাহানি, হত্যা ও লুটপাটসহ ১৮টির বেশি মামলা রয়েছে।

এরই মধ্যে রোববার সন্ধ্যায় বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি নুর মোস্তফা প্রকাশ বজলকে তৌহিদুল ইমলাম প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। মূলত এলাকায় খারাপ কাজের বাধাদান ও তার বিরুদ্ধে সালিশি বৈঠকে এলাকা ছাড়া করার কারণে বজলকে খুন করেছে বলে জানান নিহতের ছেলে তাওসিফ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাসী তৌহিদুল ছোটবেলা থেকেই ইভটিজিং, চুরি ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিল। বিগত ১০ বছর ধরে, বিভিন্ন ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে আহত ও নিহতের ঘটনা রয়েছে। মাঝেমধ্যে এলাকায় ভয়ভীতি দেখানোর উদ্দেশ্যে পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দেয়। এরই মধ্যে এলাকায় চাঁদাবাজির ঘটনায় এলাকা ছাড়া করে স্থানীয় গ্রামবাসী।

কয়েক বছর পূর্বেও উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের শেখের হাট এলাকার নুরুল হুদা নামে এক ব্যক্তির ডান পা কেটে ফেলা হয়। রীতিমতো তার অত্যাচার অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।

সন্ত্রাসী তৌহিদুল প্রথমে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে এক সময় জড়িত ছিলেন। ক্ষমতার পালাবদলের পর রাজনৈতিক পরিচয়ও বদলে যায় তার। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অনুসারী হয়ে পরবর্তীতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারী হন। এর পর স্থানীয় সাংসদ দিদারুল আলমের অনুসারী হয়ে নানা অপকর্মে জড়িত হন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর লোক হিসেবেও বিভিন্ন স্থানে পরিচয় দেন।

নিহতের ছেলে তাওসিফ ফেরদৌস তারেক বলেন, আমার বাবা বিএনপির রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে রাজনৈতিক কারণে তাকে খুন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। হত্যাকারী আমাদের আত্মীয় হয়। তার নাম তৌহিদুল ইসলাম। তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে নানা অপকর্মে জড়িত থাকতেন। আমার বাবা এর প্রতিবাদ করার কারণে হত্যা করেছে। তিনি আরও বলেন, বাবাকে প্রকাশ্যে খুনের আধ ঘণ্টা পর তার ব্যবহৃত মোবাইলে 01404523122 নম্বর থেকে কল করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন সন্ত্রাসী তৌহিদুল।

বিএনপির দাবি হত্যাকারী আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী

নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার নিহত নুর মোস্তফা প্রকাশ বজল ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি বলে নিশ্চিত করেছে বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবু জাফর ভুঁইয়া।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি ইসমাইল হোসেনের বড় ভাই সীতাকুণ্ড উপজেলার বারৈয়ারঢালা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি নুর মুস্তাফা বজলকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা রোববার সন্ধ্যা ছয়টায় তার নিজ এলাকায় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।

কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান তারা।

সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক কারণে এই হত্যাকাণ্ড হয়নি। হত্যাকারী তৌহিদুল তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি হত্যাসহ ১৮টির অধিক মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।

চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আল মামুন বলেন, সন্ত্রাসীরা কখনো রাজনৈতিক কর্মী হতে পারে না। পারিবারিক ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে নুর মোস্তফা খুন হয়েছে বলে শুনেছি। হত্যাকারীদের শান্তির আওতায় আনতে হবে। কোনো সন্ত্রাসী ডাকাতকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ