ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আমতলীতে হরদমে চলছে অবৈধ ইটভাটা

প্রকাশনার সময়: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৮

বরগুনার আমতলী উপজেলায় চলছে একাধিক অবৈধ ইটভাটা। অতিরিক্ত কাঠ পোড়ার কারণে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ ও ফসলি জমি। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলাটিতে মোট ২১টি ইটভাটার সরকারিভাবে অনুমোদন থাকলেও প্রায় ২৫টির অধিক ইটের ভাটা বর্তমানে চালু রয়েছে। যার বেশিরভাগ ইটভাটার মালিকরা আইনের তোয়াক্কা না করে ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছেন। যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং যার বেশিরভাগ ভাটার মালিক উপজেলার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। যার কারণে ভয়ে কেউই ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে জানাতে এগিয়ে আসছে না এমনটাই অভিযোগ ইটের ভাটাগুলোর আশপাশের স্থানীয় এলাকাবাসীর।

সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সরেজমিনে আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী এলাকার মেসার্স ইসলাম অ্যান্ড সন্স ব্রিক্স, উত্তর টিয়াখালির মেসার্স সাউথ ব্রিক্স, কাউনিয়া ইউনিয়নে মেসার্স জোবায়েদা ব্রিক্সসহ গাজীপুর বাজার এলাকার বেশকিছু ইটভাটায় দেখা যায়, অবৈধভাবে অতিরিক্ত কাঠ পোড়ানো হচ্ছে আইনের বাইরে। ইটভাটাগুলোতে বছরে কয়েক কোটি ইট পোড়ানো হয়। ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে অবৈধ ট্রলিতে করে শ্রমিকরা মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। ইট পোড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় মাটি ভাটার মালিকরা ফসলি জমি থেকে কেটে নিচ্ছে। আবার অনেকে ইটভাটাতে মাটি বিক্রির জন্য কৃষি জমি কেটে পুকুর খনন করেছে। এর ফলে হাজার হাজার একর কৃষি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে।

ভুক্তভুগী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফসলি জমি কেটে ইটভাটাতে নিয়ে যাচ্ছে। এতে ফসলি জমির অনেক ক্ষতি হচ্ছে। প্রায় ভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা সাধারণ মানুষ হয়ে তাদের বিরুদ্বে দাঁড়াতে সাহস পাই না। উপজেলা কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেন বিষয়টি তিনি সরেজমিনে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু দিন কেটে যাচ্ছে, ইটভাটাগুলো তাদের নিজস্ব আইনে চালাচ্ছে। কেউ বাধা দিতে গেলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়।

কালিবাড়ির বাসিন্দা মুজিবুর রহমান বলেন, সরকারি জমিতে কৃষি কাজের জন্য গরিব অসহায়দের মাঝে ফসলি জমি দেওয়া হলেও কিন্তু মেসার্স ইসলাম অ্যান্ড সন্স ব্রিক্স এর মালিক এ আর রফিকুল ইসলামের ভাই মঈনউদ্দিন প্রভাবশালী হওয়ায় নিজস্ব লোকজন ও ভেকু দিয়ে মাটি কেটে এ আর রফিকুল ইসলামের মালিকানাধীন ইটভাটায় বিক্রি করছে। আমরা স্থানীয়রা কেউ কিছু বলতে গেলে মামলাসহ তার লোকজন দিয়ে মারধরের হুমকি দেয়।

স্থানীয় পরিবেশ কর্মী আরিফুল ইসলাম বলেন, ইটভাটাগুলোর খুব কাছাকাছি বেশকিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকায় ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।

এদিকে ইট পোড়ানোর কারণে সৃষ্ট কালো ধোঁয়া আর উড়ে আসা ধূলোবালিতে শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্টজনিত অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে, বিপন্ন হচ্ছে শিশুদের জীবন।

এ বিষয় মেসার্স ইসলাম অ্যান্ড সন্স ব্রিক্সের মালিক এআর রফিকুল ইসলামকে কল করলে তিনি ফোন কেটে দেন। অপরদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের আসার খবর পেয়ে মইনুদ্দিন ভেকু দিয়ে মাটি কাটার কাজ বন্ধ রাখেন।

সাউথ ব্রিক্সের মালিক গোলাম ফারুক বলেন, আমার ভাটার মতো আমতলীতে অনেক ভাটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে গড়ে উঠেছে। আমার ভাটার সকল কাগজ (অনুমতিপত্র) রয়েছে। শুধু আমার ভাটার কাছে নয়, প্রায় ভাটার এক কিলোমিটারের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বরগুনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আক্তারুজ্জামান বাহাদুর বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) ২০১৯ অনুযায়ী, বিশেষ কোনো স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। তবে এই আইন লঙ্ঘন করে বরগুনায় চলছে ইটভাটাগুলো। এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম জানান, দ্রুত খোঁজখবর নিয়ে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ