ঢাকা, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১, ৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

৪ মাসের কাজ শেষ হয়নি ৪ বছরেও, দুর্ভোগ চরমে

প্রকাশনার সময়: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:০৯ | আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:২৬

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর-পাকুন্দিয়া-ঢাকা আঞ্চলিক সড়কের কাওনা এলাকায় নরসুন্ধা নদের ওপর নির্মাণাধীন গার্ডার সেতুর কাজ ফেলে বার বার ঠিকাদার উধাও হওয়ার অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। এতে ৪ মাসের কাজ ৪ বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার ফলে ঢাকাসহ আন্তঃজেলা হাজারো যাত্রীর চরম বিপাকে পড়েছেন।

উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ৩৭৮০ মি. চেইনেজে ৪০মিটার দৈর্ঘের পিসি গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজের জন্য ২০২১ সালের ১১ ফ্রেব্রয়ারিতে কুমিল্লার এইচ/এন-৪৬৪, পুনাম পেলস, এইচটিবিএল সার্চ (জেবেকা) এর সাথে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নরসুন্ধা নদের ওপর ব্রিজ নির্মাণের চুক্তি হয়। ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে সাব-কন্টাক হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয় জেলার এস আলমের সাথে। যা সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল সেই বছরের ৩০ জুনের মধ্যে।

তবে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে বার বার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উধাও হওয়ায় তাদেরকে বার বার চিঠি দিয়েও সেতুর কাজ সমাপ্ত করাতে পারছেন না প্রকৌশল অধিদফতর।

স্থানীয় জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বুলবুল আহমেদ জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই কাদা মাটিতে গাড়ি পিছলে নদে পড়ে যায়।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়ম অনুযায়ী, কার্ষাদেশের চুক্তির বর্ণনাসহ সর্তকমূলক সাইনবোর্ড না টানিয়েই দীর্ঘদিন ধরে কাজ ফেলে রাখায় জনমনে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। গত ঈদুল আজহার পর গার্ডারের কাজ শেষ হলেও এরপর থেকে সেখানে আর কোনো শ্রমিকের সন্ধান মিলেনি। এখনো দুইদিকের রেলিং ও সংযোগ সড়কের কাজ ফেলে রাখায় দু’পাশের অনেক রড চুরি হওয়ার আলামত পাওয়া গিয়াছে।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর ) সরেজমিনে গিয়ে চর কাওনা এলাকার আব্দুল কাদির, মো. মফিজ উদ্দিন, সৃজন মিয়াসহ কমপক্ষে ২০ জনের সাথে কথা হলে সকলেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পদ্মা সেতু করতেও এত সময় লাগেনি।

আব্দুল কাদির বলেন, ব্রিজ হলো আমাদের গলার কাঁটা। ব্রিজের কাজ করার সময়ে দু’পাশে কোনো সর্তকমূলক সাইন বোর্ডেরও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ইতিমধ্যে এখানে দু’জন লোক মারা গেছে। এ ছাড়াও প্রতিদিন এখানে ডাইভারশনে পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান পড়ে যায়। এ সময় অনেকেই আহত হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়তে হয় তারাকান্দি বাজারের সবজিবাহী অটোরিকশার। প্রায় অটোরিকশা উল্টে নদে পড়ে যায়। ডাইভারশনে ভাঙা ও ঢালু না থাকায় অনেক গাড়ির বাম্পার ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

হোসেনপুর উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী আব্দুল হক জানান, গত দেড় মাস ধরে কন্টাকটারের নাম্বারে ফোন দিচ্ছি, কিন্তু ফোন ধরছে না।

উপজেলা প্রকৌশলী গালীব মুরশীদ জানান, মূলত এ রকম সেতু করতে দেড় মাস সময়ের প্রয়োজন হলেও কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে এখনো কাজ শেষ না হওয়ায় জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জেলা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম জানান, ঠিকাদারকে দ্রুত সময়ে অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সড়কের কাজ শেষ না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উধাও রয়েছে। পরে আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নরসুন্ধা নদের ওপর সেতুর দু’দিকের দুটি গার্ডার নির্মাণ করার পর কাজ অসমাপ্ত রেখে উধাও হওয়ার অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। এতে ঢাকাসহ আন্তঃজেলা হাজারো যাত্রীর সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন।

এ বিষয়ে সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস আলম এর মালিক মো. শফিকুল আলম জানান, কোটি টাকার ওপরে বিল আটকা রয়েছে যে জন্য ফান্ডের অভাবে কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে এক কোটি দশ লাখ টাকার একটি বিল পেয়েছি শীঘ্রই কাজ শুরু করবো।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ