১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশে বিজয় অর্জিত হলেও পাবনার ঈশ্বরদী শত্রুমুক্ত হয় বিজয়ের ৫ দিন পর ২১ ডিসেম্বর। সেই থেকে ২১ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী শত্রুমুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ১৬ ডিসেম্বর বিকেলের পরপরই মুক্তিযোদ্ধারা ঈশ্বরদীতে অবস্থান নেয়। কিন্তু পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ও বিপুল পরিমাণ গোলা বারুদ নিয়ে ঈশ্বরদী ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের ফার্মে অবস্থান নেয়। তারা কোনভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে রাজি না হওয়ায় ২১ ডিসেম্বর নাটোর থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার মনজুর আহমেদ ঈশ্বরদীতে এসে মিত্র বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিং পান্নুর নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।
৭১’র ২৯ মার্চ পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের এক রক্তক্ষয়ী সম্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয় মাধপুর বটতলায়। ওই দিন মূলত কোনো কমান্ড ছাড়াই শুধুমাত্র দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে খালি হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তৎকালীন ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রাজু। এ সময় সম্মুখ যুদ্ধে আব্দুর রাজ্জাক, ওহিদুর রহমান, আব্দুল গফুর, নুরুল ইসলাম, আলী আহম্মদ, নবাব আলীসহ ১৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ৫০ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। পাবনা-৪ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর নেতৃত্বে প্রতিরোধ যুদ্ধে পাক সেনারা পালিয়ে যায়।
৭১’র ১১ এপ্রিল পাক সেনারা ঈশ্বরদী প্রবেশ করলে হাজার হাজার অবাঙালিকে ( বিহারি) উল্লাস করতে দেখা যায়। ১২ এপ্রিল ঈশ্বরদীতে বিহারিরা শুধু বাঙালিদের দোকান ও বাড়ি লুটের ঘটনা ঘটায়নি বরঞ্চ ধরে নিয়ে বহু বাঙালিকে হত্যা করে। শহরের নূরমহল্লা, ফতেমোহাম্মদপুর এলাকায় ৩২ জন বাঙলি এবং একটি হিন্দু পরিবারের ১১ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাক বাহিনী। এছাড়াও ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আশ্রয় নেওয়া ১১ জন নিরীহ বাঙালিকে ধরে এনে রেললাইনের পাশে কয়লা গুদামে হত্যা করে গণকবর দেয়।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ