ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পীরগঞ্জের অধিকাংশ সরকারি অফিসে উত্তোলন হয়নি জাতীয় পতাকা!

প্রকাশনার সময়: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:০২ | আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:০৬

মহান বিজয় দিবসে সকল সরকারি ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা দেয়া হলেও তা মানেনি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের অধিকাংশ সরকারি দফতর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ অনেকেই। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অধিকাংশ সরকারি অফিসেই উত্তোলন করা হয়নি জাতীয় পতাকা। উপজেলা প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন সুশীল সমাজ।

অনেকে বলছেন, জাতীয় দিবসে সরকারি, বে-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন না করা জাতীয় পতাকা অবমাননার সামিল। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলছেন, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে দেখছেন তিনি।

শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, সমাজসেবা অফিস ও আনসার ভিডিপি অফিসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হলেও উপজেলা শিক্ষা অফিস, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, পরিসংখ্যান অফিস, কৃষি অফিস, খাদ্য অফিস, মৎষ্য অফিস, সমবায় অফিস, পল্লী উন্নয়ন অফিস, নির্বাচন অফিস, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কার্যালয়সহ অন্যান্য সরকারি দফতরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সহ তার বাসভবনে আলোকসজ্জা করা হলেও তার বাস ভবনে টাঙানো হয়নি জাতীয় পতাকা। সেটি ছাড়াও উপজেলা পরিষদের সরকারি কোনো বাসভবনেও জাতীয় পতাকা টাঙানো হয়নি। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পীরগঞ্জ কটন ইউনিট অফিসারের কার্যালয়ের সামনে একটি ছোট পাইপের মাথায় দায়সাড়াভাবে পতাকা টাঙানো হয়েছে। এছাড়াও পীরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১১টা ৩৭ মিনিট পর্যন্ত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষককে ফোন করার পর অবশ্য পতাকা টাঙানো হয়। মডেল স্কুলের মতো বিজিবি স্কুলসহ আরও বেশকিছু স্কুলে জাতীয় পতাকা তোলা হয়নি বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হলেও যমুনা ব্যাংক উপ শাখা কার্যালয়সহ শহরের বেশিরভাগ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি।

ঠাকুরগাঁও জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. আবু সায়েম বলেন, বিধি মোতাবেক পতাকা উত্তোলন না করা জাতীয় পতাকা অবমাননার শামিল। ২০১০ সালে সংশোধিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন আইন অনুযায়ী জাতীয় পতাকা অবমাননায় সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত শাস্তি এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই।

পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুল হক বলেন, বিজয় দিবসে সরকারি স্কুল ও অফিসে জাতীয় পতাকা না তোলা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশে আইন আছে প্রয়োগ নেই।

পীরগঞ্জ উদীচীর সভাপতি জয়নাল আবেদিন বলেন, এটি চেতনার বিষয়। বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করা মানে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতি অবজ্ঞা করা। উপজেলা প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এরকম হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারুল বেগম বলেন, তিনি ঢাকায় আছেন। স্কুলের দফতরিকে পতাকা টাঙাতে বলেছিলেন। সে সময়মতো টাঙায়নি। এটা একটু ভুল হয়ে গেছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার হাবিবুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পরিষদে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন। আমাদের আলাদা করে পতাকা উত্তোলন করতে হবে কেন? তবে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সময়মতো জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার বিষয়টি ভুল হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে যমুনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করা প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমিজ আলম বলেন, সরকারি দফতরগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় কিনা-এটা তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন। তার বাস ভবনে পতাকা উত্তোলন না করা বিষয়ে তিনি বলেন, দুদিন হল তিনি এ উপজেলায় এসেছেন। তাই সবকিছু ঠিক করতে পারেননি। আগামীতে বিষয়গুলি দেখা হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ