ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিজয় দিবস ঘিরে কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ভিড়

প্রকাশনার সময়: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:০৪

সরকার পতনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর সারাদেশে টানা অবরোধ কর্মসূচির ফলে গত দেড় মাসের চলমান অবরোধে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে কক্সবাজারের পর্যটন। এ সময়ে এ খাতের ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনেছে কমপক্ষে ৭০০ কোটি টাকা। তবে, সেই ক্ষতের ঘা শুকাতে 'মলম' হিসেবে কাজ করছে বিজয় দিবস ঘিরে তিনদিনের ছুটি। এরই মধ্যে বিজয় দিবসের ছুটিতে কক্সবাজারে ভিড় বাড়তে পর্যটক-দর্শণার্থীদের। এতে জেলার পর্যটন খাতে তিনদিনে ১০০ কোটি টাকার লেনদেন হতে পারে।

পর্যটন সংশ্লিষ্ঠ নানা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রতি বছর ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় পর্যটন মৌসুমের। এবারের মৌসুম শুরু হতে না হতেই ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপির ডাকা টানা অবরোধ কর্মসূচি পর্যটন বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটক শূন্য হয়ে পড়ে কক্সবাজার। ফলে ভরা মৌসুমে প্রতিদিন পর্যটন খাতের সকল অনুষঙ্গ মিলে কমপক্ষে গড়ে ১০-১৫ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, পর্যটনের এই অন্ধকার যাত্রায় আলো হয়ে আসে কক্সবাজারের সাথে রাজধানীর রেলপথ যোগাযোগ। ১ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা-কক্সবাজারের পথে রেল যোগাযোগ চালু হওয়ায় প্রতিদিনই কয়েকশ পর্যটক আসা যাওয়া রয়েছে। যদিও প্রায় ৫০০ আবাসিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এ সংখ্যা অতিনগণ্য।

তবুও চলতি বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে গেল ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত হোটেল মোটেলের প্রায় ৮০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। পাঁচ তারকা হোটেলসহ কক্সবাজারে প্রায় ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল, কটেজ ও ফ্লাট বিল্ডিং রয়েছে। এসব আবাসিক প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগাম বুকিং। এছাড়া ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলোতেও কোনো টিকিট নেই। সবমিলিয়ে চলমান অবরোধে ধরা ক্ষত কিছুটা পোষানোর স্বপ্ন দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এবারে পর্যটনের ভরা মৌসুমকালে রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটন শুন্য যাচ্ছে কক্সবাজার। তবে-কিছুটা আশা জাগাচ্ছে বিজয় দিবস। ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল ও কটেজের ৮০-৮৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। গত বুধবার থেকে কক্সবাজারে অর্ধলাখের বেশি পর্যটক রয়েছে। বিজয় দিবস নিয়ে এটি লাখ-দেড়েকে দাঁড়াতে পারে। তবে, সবাই পর্যটক নয়-দর্শণার্থীও থাকবেন।

কাশেম সিকদার আরও বলেন, অবরোধের কারণে শুধুমাত্র গেস্ট হাউস-হোটেল সেক্টরে প্রতিদিন কর্মচারী বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ ও জেনারেটরসহ অন্যান্য খাতে কমপক্ষে গড়ে ৫০-৭০ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে আমাদের। সেই হিসেবে আবাসন খাতেই দিনের খরচ বাবদ লোকসান কয়েক কোটি টাকা।

সৈকতে ডুবে যাওয়া পর্যটক উদ্ধারে কাজ করা সি সেইফ লাইভ গার্ডের সুপারভাইজার মুহাম্মদ ওসমান জানান, বৃহস্পতিবার হাজারো পর্যটকের পদভারে মুখরিত সৈকত। কেউ গোসলে ব্যস্ত, কেউ বেলাভূমিতে আকুবুকি করছে। কেউ ব্যস্ত প্রিয়জনের হাত ধরে হাটতে। কেউবা কিটকটে শুয়ে সমুদ্র দেখছে। কেউ জেটস্কি নিয়ে ঢেউ ভাঙ্গছে, চড়ছে ঘোড়ায়। আবার অনেকেই ছুটছে বিচ বাইক নিয়ে। শিশুরাও আপন মনে খেলছে।

কলাতলীর পাঁচ তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, দিবস উপলক্ষ্যে কক্সবাজারে লাখের কাছাকাছি পর্যটক মৌসুমে নিয়মিত আসে। তবে এক মৌসুমের পর্যটক বলা যাবে না। টানা ছুটিতে এমনিতে এখানে লোকজন আসে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন তাদের সেমিনার, সভাসহ নানা বার্ষিক কাজ করতে একত্র হয়েছে। তাদেরকে পর্যটক বলা যাবে না। তবুও বলা যায় অবরোধ পর্যটন সেক্টরে যা ঘা তৈরি করেছিল সেই ঘায়ে কিছুটা প্রলেপ দিচ্ছে বিজয় দিবস।

হোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, গেল বিজয় দিবসে পর্যটন খাতে হাজার কোটি টাকার লেনদেন হলেও এবার তা অর্ধেকে নেমে আসবে। এবার বিজয় দিবসের দিন কক্সবাজারে কমপক্ষে দেড়লাখ পর্যটকের সমাগম হবে বলে আশা করছি।

বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতির কক্সবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম, পর্যটক সেবায় কক্সবাজার শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫০ রেঁস্তোরা রয়েছে। একেকটি রেঁস্তোরায় প্রতিদিন গড় ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ। অথচ অবরোধে বিকিকিনি হচ্ছে হাজার দশেক টাকা। প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। বিজয় দিবসে ক্ষতির কিছুটা পোষাতে পারে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র কলিম উল্লাহ বলেন, অবরোধে ক্ষতিতে পড়া পর্যটন শিল্পে রেল যোগাযোগ বাড়ানো আশির্বাদে রূপ নিতে পারে। দেশের বিভিন্ন স্থান হতে রেল আসলে ঘুরে দাড়াবে পর্যটন শিল্প। ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর সেন্টমার্টিন পর্যটকের ভরপুর থাকবে। বিজয় দিবসের পর থার্টিফাস্ট নাইটেও সৈকতে জুড়ে পর্যটক সমাগম বাড়তে পারে।

ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান মিল্কী বলেন, পর্যটন মানে আবাসিক প্রতিষ্ঠান ও রেঁস্তোরা নয়। এর সাথে সংশ্লিষ্ট গণপরিবহন, জাহাজ, ট্যুর অপারেটর, দর্শনীয় স্থানসহ পর্যটন সেবায় যুক্ত সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গেল ৪৭ দিনে সবখাতেই লোকসান হয়েছে।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, অবরোধে গণপরিবহন বন্ধ। তাই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন কক্সবাজারে আসতে পারছে না বলেই পর্যটনে ধস নেমেছে। গত দেড় মাসে পর্যটন অনুষঙ্গ সকল সেক্টরে প্রায় ৫-৭শ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এ থেকে উত্তোরনের উপায় হলো কক্সবাজারে রেলের সংখ্যা বাড়ানো এবং সারাদেশকে যুক্ত করা। রেল চালু হওয়ার পর মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ জন পর্যটক আসার সুযোগ পাচ্ছে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ