ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সরকারি স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি বন্ধ করলেন প্রধান শিক্ষক

প্রকাশনার সময়: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৫৬

ঠাকুরগাঁওয়ে জাতীয়ভাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাণীশংকৈল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণির ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছেন বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছেলিমা সিদ্দিকা। এছাড়াও কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তূপ তৈরি হয়েছে। পক্ষে বিপক্ষে স্যোশাল মিডিয়ায় ভিডিও ভাইরাল, থানায় সাধারণ ডায়েরি, শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দফতরে এদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ হয়েছে।

জানা যায়, ওই স্কুলে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়ে রয়েছে। হঠাৎ করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সরকারি কারিকুলামকে সমস্যা দেখিয়ে সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণির ভর্তি বন্ধ করে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে অভিভাবক ও পৌর শহরের স্থানীয়রা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৩ ডিসেম্বর অভিভাবক সদস্য নওরোজ কাউসার কাননকে সাথে নিয়ে প্রায় ১০০ জন অভিভাবক বিদ্যালয়ে যায়। পরে ১৫ থেকে ২০ জন অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের রুমে প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর প্রধান শিক্ষক আসেন। এসময় অভিভাবকরা ভর্তি কেন বন্ধ করা হয়েছে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছেলিমা সিদ্দিকা আলাপচারিতার এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে বলেন, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত একরকম কারিকুলাম এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম পর্যন্ত নতুন কারিকুলাম হওয়ায় এটিকে সমস্যা মনে করে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি বন্ধ করা হয়েছে।

এসব কথা শুনে অভিভাবক সদস্য কাননসহ অন্যান্য অভিভাবকরা বলেন, সরকারি নিয়মকে অবজ্ঞা করে আপনি এটা করতে পারেন না। এভাবে কথাকাটা কাটির এক পর্যায়ে দুই পক্ষেই উত্তেজিত হয়ে উঠে। এই উত্তেজিত ঘটনার দুপক্ষের দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হলে বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই পক্ষেই থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে।

ওই স্কুলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিউটি আক্তার অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছেলিমা আক্তার স্কুলের স্টাপ মিটিংয়ে কারিকুলামের সমস্যা তুলে ধরে বলেন, এবার তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে কোনো ছাত্র ভর্তি করাবেন না। প্রধান শিক্ষকের এমন মন্তব্য নিয়ে অন্যান্য সহকারী শিক্ষকরা এর বিরোধিতা করেন।

এ ব্যপারে অভিভাবক ও স্কুল কমিটির সদস্য সাবেক কাউন্সিল সিরাজউদ্দিন সিরু, ইস্তেকার, মহসিন, কাউন্সিলর সেফাউল আলম, রুমা বসাক, সেলিনা আকতার, মুনজুরুল আলম, মাসুম, রফিকুল ইসলামসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ধীরেন্দ্রনাথ ও শেফালী খাতুনসহ কয়েকজন বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম করে আসছে, তারা স্কুলে গ্রুপিং সৃষ্টির মূলহোতা। তাদের বদলি করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছেলিমা সিদ্দিকার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন।

সহকারীর শিক্ষা অফিসার ঘ্যানশ্যাম রায় বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে কোচিং বাণিজ্য ও তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়েই মূলত গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হয়েছে বিধায় স্কুলটির শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত স্কুলটির বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাকে অনেকে মৌখিক অভিযোগ করেছে। স্কুলটির আগের সুনাম ফিরে পেতে প্রাথমিক অধিদফতরের দ্রুত সুদৃষ্টি কামনা করছি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রাহিমউদ্দিন বলেন, ওই ঘটনার সাথে জড়িত অভিযুক্ত শিক্ষকদের ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, আমার কাছে অভিভাবকরা একটি লিখিত করেছে। শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ