ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কুড়িগ্রামে সরিষার হলুদে সেজেছে মাঠ

প্রকাশনার সময়: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৩৭ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৩৯

কুড়িগ্রামের উলিপুরে সরিষার ফুলে ফুলে ভরে গেছে খেত। বাম্পার ফলন ও দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন চাষিরা। দিগন্ত জোড়া মাঠ যেন রঙিন রুপে সজ্জিত। মৌ মৌ গন্ধে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। পথচারীরা সেই গন্ধে মুগ্ধ হচ্ছেন এবং মৌ মাছিরাও মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।

গত বছর সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় এবারও সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছরও লাভবান হবে বলে আশা করছেন কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থ বছরে ৮'শ ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিলো এবং কৃষক কিছুটা লাভবান হয়েছিলো। চলতি অর্থ বছরে ১ হাজার ৯'শ ৩০ হেক্টর জমি সরিষা চাষের জন্য নির্ধারাণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ১ হাজার ৪ শত ৬৫ হেক্টর যা চলমান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১.৫৭ টন। মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৩০ মেট্রিকটন। এখানে প্রদর্শনীও রয়েছে।

এ উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদ ও তিস্তা নদী বেষ্টিত হওয়ায় প্রতি বছরই প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক কোনো কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। সে দিকটি বিবেচনা করে কৃষি অধিদফতর সারা দেশের ন্যায় এ উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রণোদনা স্বরুপ ৪হাজার ৯'শ ৮০ জন কৃষকদের প্রতিজনের জন্য ৩৩ শতক জমি নির্ধারণে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফসলের মাঠগুলো সরিষা ফুলের হলুদ রঙে অপরূপ শোভা ধারণ করেছে। মাঠে পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। ধান বা অন্য ফসলের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়ছে।

স্থানীয় সরিষা চাষিরা জানান, উঁচু জমি সরিষা চাষের জন্য উপযুক্ত। প্রথমে হালকাভাবে চাষ করে সরিষার বীজ বপন করতে হয়। পরে দু-এক বার কিছু ওষুধ ও কীটনাশক দিলেই সহজে ফলন ভালো হয়। তুলনামূলক কম পরিশ্রম ও বর্তমানে সরিষার বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় দিন দিন সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে এ অঞ্চলের কৃষকদের। এ অঞ্চলের কৃষকেরা বরাবর বোরো ও আমন এই দুটি ধান চাষেই বেশি আগ্রহী কিন্তু সমসাময়িক সময়ে উৎপাদনের সাথে ব্যয়ভার বেড়ে যাওয়ায় নতুন নতুন উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

ব্রহ্মপুত্র নদ ও তিস্তা নদীর বুকের ওপর জেগে ওঠা চরেও সরিষা চাষ হয়েছে। এ বছর সর্ব পর্যায়ের জমিতেই সরিষার চাষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলন হবে এমনটাই আশা করছে এ অঞ্চলের কৃষক।

উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের হারুনেফড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক আশরাফ আলী খন্দকার জানান, তিনি ৮৫ শতক জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার টাকা। কাটা মাড়াই সহ আরও খরচ হবে প্রায় ৪ হাজার টাকা। ফসল ঘরে উঠানো পর্যন্ত মোট খরচ হবে ৮ হাজার টাকা। তিনি ১০ মণ সরিষার আশা করছেন। বাজারদর মণ প্রতি ৩ হাজার টাকা হলে মোট ৩০ হাজার টাকা আশা করছেন।

তিনি আরও বলেন, একই জমিতে আমনের ফসল ঘরে তোলার পর সেখানে সরিষার চাষ করে তার ফলনও ঘরে তোলে সেই জমিতে বোরো ধান চাষ করব। একই জমিতে তিন চাষ। সরিষা চাষে অল্প খরচে অল্প সময়ে দ্বিগুণ লাভ করা যায়।

এ ছাড়া অন্যান্য এলাকার সরিষা চাষিদের মধ্যে মহশিন মিয়া, মাহাতাব আলী, আবু মিয়া ও খতিব মিয়া সহ আরও অনেকে একই কথা জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন বলেন, আবহাওয়া আর যথাযথ পরিচর্যার কারণে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পুনর্বাসন ও প্রণোদনার আওতায় আমরা ৪৯৮০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে বীজ ও সার সরবরাহ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার্বক্ষণিকভাবে মাঠে সরিষা চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই ও পোকামাকড় দমন সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার ফলন অনেক ভালো হবে। সরিষার বাজার আশানুরূপ থাকলে সরিষা চাষিরা অনেক লাভবান হবে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ