স্ত্রী ও সন্তানের পিতৃত্বের স্বীকৃতির দাবিতে হবিগঞ্জে এসেছেন পাকিস্তানি নারী মাহা বাজোয়া। তিনি জেলার চুনারুঘাট পৌরসভার উত্তর বাজার বড়াইল গ্রামে সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার নামের এক যুবকের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন।
পাকিস্তানের লাহোরের পাঞ্জাব সোসাইটির গাজি রোডে ওই নারীর বাড়ি। ওই নারী বাংলাদেশে আসার খবরে সাজ্জাদ আত্মগোপনে চলে গেছেন।
ওই পাকিস্তানি নারী জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই থাকার সুবাদে সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ২০ লাখ টাকা রেজিস্ট্রারি কাবিনে পাকিস্তানে বিয়ে করেন। পরে সাজ্জাদ তাকে ২০১৮ সালের ২৩ আগস্ট বাংলাদেশে নিয়া আসেন এবং তার চুনারুঘাটের বাসায় মাস দুয়েক ছিলেন। পরে ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে এলে পাকিস্তানে চলে যান তিনি। দুজনের পরিবারে ৯ বছরের একটি মেয়ে আছে।
বর্তমানে সাজ্জাদ দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। এ নিয়ে দুজনের মাঝে পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। পরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন সাজ্জাদ। উপায়ন্তর না দেখে ওই নারী ভিসা নিয়ে গত ১৭ নভেম্বর পাকিস্তান থেকে চুনারুঘাটের বড়াইল আসলে সাজ্জাদের পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে ওই নারী চুনারুঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৭ নভেম্বর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে স্বামীর বাড়িতে আসেন। সেখানে স্বামী সাজ্জাদ ও তার স্বজনরা তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন এবং ওই তরুণীকে মিথ্যা মোকদ্দমায় জড়িত করে ‘বাংলাদেশে আসার মজা শিখাইয়া দেবে’ বলে হুমকি দেয়। ঘটনা জানতে সরেজমিন সাজ্জাদের বাসায় গেলে তাকে পাওয়া জায়নি।
তবে তার বোন ও ভগ্নিপতি, ২০২২ সালের ২৩ মে পাকিস্তানি নারীকে সাজ্জাদের তালাকের একটি এফিডেভিড দেখান। কিন্তু পাকিস্তানি নারী এ তালাক আইনসম্মত নয় এবং তিনি তালাক সংক্রান্ত কোনো নোটিশ পাননি বলে জানিয়ে অবস্থান চালিয়ে যান।
পাকিস্তানি নারী মাহা বাজোয়া বলেন, সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার ওরফে হিরা দুবাই নাইটক্লাবে কাজ করত, সেই সুবাদে আমাদের পরিচয় হয়। চট্টগ্রামের সেলিম নামের একজনের মালিকানাধীন নাইটক্লাবে সাজ্জাদ হোসেন ওরফে হীরা কাজ করত। বছর খানেক আগে সেলিমের মালিকানাধীন নাইটক্লাবে দুবাইয়ের একজন স্থানীয় অতিরিক্ত নেশাগ্রস্ত হয়ে মারা যান। তখন সাজ্জাদের মালিক সেলিমকে দুবাই পুলিশ গ্রেফতার করে। তারপর সেলিমের স্ত্রী সোনিয়া ওরফে মুন্নীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে সাজ্জাদ। একপর্যায়ে সোনিয়া কারাবন্দি স্বামীকে রেখে তার জমানো অর্থকড়ি নিয়ে হিরাকে বিয়ে করে বাংলাদেশে চলে আসে। এরপর থেকে সাজ্জাদ আমার সঙ্গে মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তাই স্ত্রীর অধিকার আদায়ের জন্য অনশনে বসেছি। মরে গেলেও স্বামীর সঙ্গে দেখা না করে পাকিস্তান ফিরব না।
পরে সাজ্জাদের বড় ভাই স্বপন ও তার স্ত্রী ওই নারীর সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তাকে বুঝিয়ে হীরার বাসা থেকে তাদের নিজ বাসায় নিয়ে যান। বর্তমানে ওই নারী সাজ্জাদের বড় ভাইয়ের বাসায় অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে সাজ্জাদের বক্তব্য নিতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
চুনারুঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অজিত কুমার তালুকদার বলেন, ওই এলাকায় স্বামীর বাড়ির লোকজন স্বামীর বাড়িতে উঠতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ওই বিদেশি নারী। সাজ্জাদের বাড়ি থেকে জানিয়েছে, সাজ্জাদ হোসেন তার পাকিস্তানি স্ত্রীকে তালাকনামা পাঠিয়েছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ