ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশনে থামছে না কোনো ট্রেন

প্রকাশনার সময়: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:০৮

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশন জনবল সংকটের কারণে গত ছয় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশনের মতো পরিণতি বরণ করতে চলেছে গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশনটিও।

এখনো পর্যন্ত রাজবাড়ী থেকে বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের মানুষ এই রুট ব্যাবহার করে চলাচলের জন্য। বিশেষ করে যারা আরিচা, মানিকগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর চাকরি করে তাদের বড় একটা অংশ নদী পার হয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য এই ট্রেনের উপর ভরসা করে থাকে। তাছাড়া ঈদ-পুজোসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভিড়ে তারা ট্রেন বেছে নেয়।

এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাইরে রেখে একের পর এক ট্রেন এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রেলস্টেশনের পাশে গড়ে উঠা বিভিন্ন খাবার হোটেল, থাকার জন‍্য বোডিং ও অন্যান্য দোকানদাররা কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় বেশ কয়েকটি ট্রেন গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন রুটে চলাচল করত। প্রতিদিন এই স্টেশন থেকে ট্রেনে দেশের বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করতেন হাজারো মানুষ। মধুমতি এক্সপ্রেস নামের একটি আন্তঃনগর ট্রেন রাজশাহী-গোয়ালন্দ ঘাট রুটে নিয়মিত চলাচল করত। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের প্রাক্কালে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশন থেকে প্রত্যাহার করে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় স্থানান্তর করা হয়।

এর আগে খুলনা-গোয়ালন্দ ঘাট রুট থেকে তিতুমীর এক্সপ্রেস নামের আরেকটি আন্তঃনগর ট্রেন প্রত্যাহার করে রাজশাহী-চিলাহাটি রুটে স্থানান্তর করা হয়। অন্যদিকে গোয়ালন্দ ঘাট-পার্বতীপুর রুটে শিলিগুড়ি নামে একটি লোকাল ট্রেন চলাচল করত। রেলওয়ের ৫১৩ নম্বর ওই লোকাল ট্রেনে প্রতিদিন উত্তরাঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা স্বল্প খরচে বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করতেন। ইঞ্জিন ও বগি সংকটের কারণ দেখিয়ে ২০১২ সাল থেকে ওই ট্রেনটি পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি আন্তঃনগর ট্রেন প্রত্যাহারের পর থেকেই গোয়ালন্দ ঘাটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা হোটেল-রেস্তোরাঁ, বোডিং, দোকানপাটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দুর্দিন শুরু হয়। তবে নকশিকাঁথা মেইল ট্রেন ও একটি লোকাল ট্রেন এই স্টেশনে আসা-যাওয়া করায় কোনোক্রমে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গত ১ ডিসেম্বর থেকে নকশিকাঁথা মেইল ট্রেনটি গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশনের পরিবর্তে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে চলাচল শুরু করেছে। এই ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গোয়ালন্দ ঘাটের শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

হোটেল ব্যবসায়ী সেলিম শেখ (৪০) জানান, তিনি ২০ বছর ধরে গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশনে হোটেল ব্যবসা করে আসছেন। একটা সময় খুব জাঁকজমক ব্যবসা ছিল। এখন স্টেশনে আগের তুলনায় লোক সমাগম নেই বললেই চলে। তারপরও দুটি ট্রেনের যাত্রীদের আশায় হোটেল চালু রেখেছিলেন। অন্যান্য ট্রেনের মতো মেইল ট্রেনটিও (নকশিকাঁথা) বন্ধ গেল। এখন হোটেল বন্ধ করে বেকার হয়ে বাড়িতে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই।

গোয়ালন্দ ঘাট স্টেশন মাস্টার আব্দুল জলিল বলেন, এই স্টেশনে এখন থেকে শুধু একটি শাটল (লোকাল) ট্রেন চলাচল করবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, উন্নয়নের ফলে কালের বিবর্তনে অনেক সময় ঐতিহ্যবাহী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। স্বপ্নের পদ্মাসেতুতে রেল চালু হওয়ার ফলে গোয়ালন্দ ঘাটের পরিবর্তে পদ্মাসেতু হয়ে ট্রেন ঢাকায় যাচ্ছে। এতে যাত্রীদেরও সময় এবং ভোগান্তি কমে গেছে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ