ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি নিশ্চিত করবে রাজশাহী ওয়াসা

রাজশাহীতে নির্মাণ হচ্ছে ‘ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার’
প্রকাশনার সময়: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:০৫ | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:০৮

বিশুদ্ধ পানি সকলেরই প্রয়োজন। সুস্থতা ও রোগ-বালাই থেকে দূরে থাকতে বিশুদ্ধ পানির বিকল্প নেই। রাজশাহীবাসীর দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা পানি চাহিদা পূরণ করা। এবার নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে প্রতিদিন প্রায় দুই’শ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহের টার্গেট নিয়ে গড়ে উঠছে পানি শোধানাগার। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার ও চীনের হুনান কনস্ট্রাকশন। আগামী চার বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে বলে রাজশাহী ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে।

রাজশাহীতে প্রতিবছরই ওয়াসার গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। তাই গ্রাহকদের নিরাপদ-সুপেয় পানি নিশ্চিত করাই রাজশাহী ওয়াসার প্রধান উদ্দেশ্য। তবে সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে নানা চ্যালেঞ্জে পড়তে হয় ওয়াসাকে। কারণ ভূ-গর্ভস্থ পানির উপরে নির্ভরশীল ওয়াসা। অনেক সময় ভূ-গর্ভস্থ পানিতে আয়রনসহ কিছু ক্ষতিকর পদার্থে প্রতিবন্ধকতাও পোহাতে হয়। এছাড়া দিন দিন ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এমন উভয় সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে ভূ-উপরস্থ পানি শোধনের মাধ্যমে সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করছে ওয়াসা। সেই লক্ষ্যে ‘রাজশাহী ওয়াসা ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। চার হাজার ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের আওতায় পদ্মার পানি বিশুদ্ধ করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে। রাজশাহী নগরী ছাড়াও জেলার গোদাগাড়ী, কাটাখালি এবং নওহাটা পৌরসভা মানুষ এই পানির সুবিধা পাবে বলে জানা গেছে। ফলে গ্রাহকরা আয়রন ও কেমিক্যালমুক্ত নিরাপদ পানি পাবেন।

রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাকীর হোসেন নয়া শতাব্দীকে জানান, ‘গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন হয়। পরে তা একনেকেও প্রকল্পটি পাস হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রাজশাহীর পানির সমস্যা আর থাকবে না। পাশাপাশি ভূ-উপরস্থ পানি শোধন করে সুপেয় পানি নিশ্চিত করা হবে। এর ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপরেও চাপ কমবে বলে মনে করেন তিনি।’

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১ আগস্ট ওয়াসা রাজশাহী সিটি করপোরেশনভূক্ত এলাকার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরের বছরের ১০ মার্চ থেকে রাজশাহী ওয়াসার কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় রাজশাহী নগরীর ৩০ ওয়ার্ডে ৫৬টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছিল।

বর্তমানে ওয়াসা জনসংখ্যা ভিত্তিক পানির প্রাপ্যতা (কাভারেজ) ৫২ শতাংশ থেকে ৮৪ শতাংশে উন্নীত করেছে। ফলে পানির কাভারেজ বৃদ্ধিতে পানি উৎপাদক নলকূপের সংখ্যা ৫৬টি থেকে ১১০টি করা হয়েছে। সঙ্গে পানির পাইপ লাইন ৫৫০ কিলোমিটার থেকে ৭১২ কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি দৈনিক ১৩ দশমিক ৫ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ৯ দশমিক ৯ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে। উৎপাদিত পানির ৯০ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ পানি। ২০২১ সালের মার্চ মাসে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজশাহী ওয়াসা চীনের Hunan Construction Engineering Group এর সঙ্গে ‘রাজশাহী মহানগরীতে ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ’ শীর্ষক ৪ বছর মেয়াদি একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেন। চুক্তির শর্তানুযায়ী প্রকল্প বাবদ চীন সরকারের থেকে প্রাপ্ত ঋণ রাজশাহী ওয়াসাকে পানি অভিকর বাবদ প্রাপ্ত আয় থেকেই পরিশোধ করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১০০ শতাংশ ভূ-উপরিস্থিত পানি (উৎস. পদ্মা নদী) ব্যবহার করে নগরবাসী ও পার্শ্ববর্তী পৌরসভাগুলির জন্য আয়রন ও ম্যাঙ্গানিজমুক্ত নিরাপদ ও সুপেয় পানির সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

সূত্রটি আরো জানায়, ২০১৫ সালে এ প্রকল্পের খসড়া সম্পন্ন করা হয়। পরের বছর চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে এ নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। অবশেষে চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে এ পানি শোধনাগার নির্মাণ করবে রাজশাহী ওয়াসা। সেটি স্থাপন করা হবে রাজশাহী নগরী থেকে প্রায় ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরে গোদাগাড়ী উপজেলার সারেংপুরে। সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি এনে নগরী ও এর আশপাশের এলাকায় সরবরাহ করা হবে।

ওয়াসার এমডি জাকির হোসেন আরও জানান, প্রকল্পের টাকা দিয়ে শোধনাগার স্থাপন ছাড়াও ভূমি অধিগ্রহণ এবং নতুন পাইপলাইন বসানো হবে। পুরনো পাইপলাইনগুলোও নতুন করে স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হতে সময় লাগবে প্রায় চার বছর। এরপর রাজশাহী নগরীতে আর পানির কোনো সংকট থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ