ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘মদন’ বেচে সংসার চলে বৃদ্ধ কাঞ্চন কুন্ডুর

প্রকাশনার সময়: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:২৬

‘মদন লাগবে..মদন’ গুড় ও বাদাম দিয়ে তৈরি মদন। এরকম হাঁক-ডাক দিয়ে গুরুদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পাড়া-মহল্লা ও হাট-বাজারের রাস্তায় কাঁধে বাক নিয়ে ফেরি করে মদন বেচেন বৃদ্ধ কাঞ্চন কুমার কুন্ডু (৬৭)। প্রতিদিন বিকালে গুড় ও বাদাম দিয়ে তৈরি মদন নিয়ে জীবিকার জন্য যুদ্ধ শুরু হয় তার। মদন বেচা না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ফেরেন না। মদন বিক্রি করতে কোনোদিন রাত ১০টা আবার কখনো ১১টা বাজে। মদন বিক্রি করে তার আয় হয় দুইশত থেকে আড়াই শত টাকা।

এক সময় নামকরা রসগোল্লার কারিগর ছিলেন বৃদ্ধ কাঞ্চন কুমার কুন্ডু। তিনি নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর শহরের বকুল তলা ঘাটের স্বর্গীয় অনীল কুন্ডুর জেষ্ঠ্য ছেলে। রসগোল্লার কারিগর থাকার সময় তার সবই ছিল।

কিন্তু সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব। তাই পেটের দায়ে বুড়ো বয়সে কাঁধে বাক নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করে মদন বেচে যা আয় হয় তাই দিয়ে চলে তার সংসার। কাঞ্চন কুমার কুন্ডুর বয়সের কারণে শরীরও ভার হয়ে গেছে। কণ্ঠেও জড়তা এসেছে। কিন্তু জীবিকা নির্বাহ করতে বিকল্প ব্যবস্থা নেই তার। যে বয়সে আরাম আয়েশে থাকার কথা, সেই বয়সে রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করে

মদন বেঁচতে হয় তার। তার মদন মদন চিৎকারে অনেকে বিরক্তবোধ করেন, কেউ মজা করতে গিয়ে বাক ধরে টান দেয়, ঢিল ছোঁড়ে-ক্ষেপায়। তখন তিনি তাদের গালমন্দও করেন। তার গায়ের পোশাক পুরাতন এবং কিছুটা অপরিষ্কারও। এজন্য তার মদন অনেকেই কিনেন না। কিছু উৎসুক শিশু

তার খরিদ্দার। তবে কিছু মানবিক মানুষ ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও সাহায্য করার নিমিত্তে তার মদন কিনে থাকেন।

বৃদ্ধ কাঞ্চন কুমার কুন্ডু নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘আমি প্যাটের দায়ে বুড়ো বয়সে ফেরি করে মদন বেঁচি। আমার ছেলে চঞ্চল কুন্ডু এসএসসি পরীক্ষার্থী। স্ত্রী মুক্তা রানী (৫৬) আগ বেলা দুটো ছাগল ছানা পালন করেন। বিকেলে কাগজের ঠোঙ্গা তৈরি করেন। তাতে প্রতিদিন আয় হয় পঞ্চাশ

টাকা।

তিনি আরও বলেন, আমারও এক সময় বড় মিষ্টির দোকান ছিল। তখন যশ-খ্যাতি আয় ভালোই ছিল। ভাইবোনদের ভরণপোষন করতে গিয়ে তিনি পদে পদে বিপদগ্রস্ত হয়েছেন। এখন তিনশতক জায়গার ওপর দু’টি পুরনো টিনের ঘর ছাড়া আমার কিছুই নেই। বাবা-মা, ভাইবোনের মধ্যে ছোট বোন ছাড়া সবাই মারা গেছে। এখন তিনি ও তার ছোটবোন বেঁচে আছেন। জীবনে সাহায্য বলতে গত দুই বছর ধরে প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া কিছুই পান না তিনি। তাও আবার উচ্চরক্ত চাপ, গ্যাষ্ট্রিক ও বাত-ব্যাথার ওষুধ কিনতেই টাকা শেষ হয়ে যায়। স্ত্রী-পুত্র ও বোন নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

বৃদ্ধ কাঞ্চন কুমার কুন্ডু আক্ষেপ করে বলেন, কবে থেকে নতুন জামাকাপড় পরি না। কারণ জিনিসপত্রের দাম চড়া। নতুন পোশাক কেনার সামর্থ নেই আমার। শরীরটা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে চেকআপ করে সুস্থ থাকার স্বপ্ন থাকলেও তা আমার জন্য দুঃস্বপ্ন। এসব দুঃখের কাহিনী বলতে গিয়ে চোখে তার নোনা জল এসে যায়। থাকেন “যাই-গো দাদা, মদন বেঁচতে হবে” এই বলেই ‘মদন লাগবে..মদন’ চিৎকার করে রাস্তা দিয়ে আবার চলতে থাকেন ফেরিওয়ালা বৃদ্ধ কাঞ্চন কুমার কুন্ডু।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ