ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ অতি বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ-রসুন আবাদে বিলম্ব হয়েছে। এতে লোকসানের আশঙ্কা করছে চাষিরা।
চলতি রবি মৌসুম শুরুর আগে এ বছর অতি বৃষ্টিতে মাঠে জমে থাকা পানি নামতে বিলম্ব হওয়ায় সময় মতো জমি চাষ ও বীজ রোপণ করতে পারেনি অনেক কৃষক। বিশেষ করে নিচু এলাকার আবাদি জমি থেকে পানি নামতে দেরি হওয়ায় মুড়িকাঠা পেঁয়াজ ও রসুন সময় মতো রোপন করা হয়নি। তাই এ বছর ফসল তুলতে দেরি হয়ে যাবে চাষিদের। সঠিক সময় মতো ফসল ঘরে তুলতে না পারলে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার শঙ্কা কৃষকের।
সরেজমিনে সদর ইউনিয়নের উত্তর আলম নগর মধু সিকদারের ডঙ্গীর কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা যায়, রসুন আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও রসুন বীজ বপনে সহযোগিতা করছে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা শহীদ মোল্লা (৫২), এ কে এম মঞ্জুরুল হক (৫৫) এর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছরই তারা পেঁয়াজ ও রসুনের আবাদ করে থাকেন। এ বছর তাদের এলাকা সহ পার্শ্ববর্তী কিছু এলাকায় জমি থেকে বৃষ্টি ও বর্ষার পানি নামতে দেরি হওয়ায় পেঁয়াজ-রসুন আবাদে বিলম্ব হয়েছে তাদের।
তারা জানান, এ বছর ৫২ শতাংশে এক বিঘা জমিতে রসুন আবাদে জমি প্রস্তুত, বীজ, লেবার, সার, পানি ও উঠানো পর্যন্ত প্রায় ৭০/৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ফলন ভালো হলে বিঘাপ্রতি রসুন পাওয়া যায় ৩৫/৪০ মন। এ ছাড়া মুড়িকাঠা পেঁয়াজ আবাদে খরচ হয় বিঘাপ্রতি প্রায় এক লক্ষ টাকার উপরে। ফলন ভালো হলে বিঘাপ্রতি ৮৫/৯০ মন পেঁয়াজ হয়।
এ বছর দেরিতে আবাদ করায় আশানুরুপ ফলন না হওয়ার সম্ভাবনা ও বাজার দর ভালো না পেলে লোকসানের মুখে পরার আশঙ্কা করছেন বলে জানান তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এখানকার পদ্মার উর্বর ভূমিতে মুড়িকাঠা পেঁয়াজের আবাদ বেশি উপযোগী। এই অঞ্চলে প্রতি বছর কার্তিক মাসে মুড়িকাঠা পেঁয়াজ ও রসুনের আবাদ করা হয়। পৌষ, মাঘ ও ফাল্গুন এই তিন মাস পেঁয়াজ- রসুন হাঁটে বিক্রির ভরা মৌসুম থাকে।
এই উপজেলা এ বছর ৪ শত ৪০হেক্টর (৫২ শতাংশের ২ হাজার এক শত পনেরো বিঘা) জমিতে মুড়িকাঠা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। রসুনের আবাদ হচ্ছে ৫ হেক্টর (চলমান) জমিতে। এর মধ্যে মুড়িকাঠা পেঁয়াজ চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নে ১৩৫ হেক্টর, গাজিরটেকে ২০৫, চর হরিরামপুরে ৭০ ও চর ঝাউকান্দায় ৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন জানান ‘এ অঞ্চলে মুড়িকাঠা, দানা পেঁয়াজ ও রসুনের আবাদ একই সঙ্গে হলেও হালি পেঁয়াজের আবাদ দেরিতে করে কৃষক। এ বছর এই উপজেলার কিছু নিচু এলাকায় বর্ষা ও বৃষ্টির পানির জলাবদ্ধতা থাকায় পোঁয়াজ রসুনের আবাদে বিলম্ব হয়েছে।
তিনি বলেন, উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা কম থাকলে সেক্ষেত্রে পেঁয়াজের বাজার মূল্য কম থাকে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকের ফসলের ক্ষতি না হলে দেরিতে পেঁয়াজ-রসুন আবাদ করায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ