ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপরওয়ালাই একমাত্র ভরসা ৮৩ বছর বয়সী বৃদ্ধা শেফালীর

প্রকাশনার সময়: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:৫১ | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:০১

এক সময়ে ছোট্ট নীড় ছিল, ছিল সুখের সংসার। স্বামী-সন্তান নিয়ে বেশ আনন্দেই দিন কাটছিল। কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর বাস্তবতায় সেই সুখে থিতু হতে পারেননি অভাগা এই গৃহবধূ। স্বল্প সময়ে প্রাণ প্রিয় স্বামী ও সন্তানকে হারিয়ে জগদ্দল পাথরের মতো দুঃখের খড়গ চেপে বসেছে তার জীবনে। সরকারের কোনো ভাতা বা অনুদান না পেয়ে ভিক্ষা বৃত্তিকেই বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। উপরওয়ালাই এখন তার একমাত্র ভরসা।

এতক্ষণ ৮৩ বছর বয়সী বৃদ্ধা মোসা. শেফালী বেগমের কথা বলা হচ্ছিল। তিনি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউপির চর চান্দুপাড়া গ্রামের মৃত আজিজ শরীফের স্ত্রী। স্বামী দীর্ঘ ৫০ বছর আগে সমুদ্রে গিয়ে নিখোঁজ হন, তাকে পরম যত্নে আগলে রাখা ভালবাসার প্রিয় মানুষটি। এর পরে তিনি আর ফিরে আসেননি। স্বামীর খোঁজ না পেয়ে একমাত্র ছেলে সন্তানকে আকড়ে ধরে শুরু হয় তার নতুন করে পথচলা। আর ছেলে বড় হয়ে উপার্জন করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে পাড়ি জমান রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকায়। কিন্তু নিয়তির কাছে হার মেনে সেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ২০ বছর বয়সী ছেলে শহীদুলের। আর এখানেই থমকে দাঁড়ায় শেফালীর সুখের গল্প।

ভিটেমাটি না থাকায় ভবঘুরে হয়ে যান তিনি। দেহের নিঃশ্বাসটুকু সচল রাখতে বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তির পেশা। তবে বয়সের ভাড়ে প্রায় শতবর্ষী এই বৃদ্ধার রোগাক্রান্ত দুর্বল শরীর নিয়ে এখন বেশিক্ষণ হাটতেও পারেন না। তবুও বেঁচে থাকার ক্ষীণ আশাটুকু নিয়ে ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে ঘুরে বেড়ান মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। যেদিন ভিক্ষাবৃত্তিতে উপার্জন হয় সেদিন উনুনে হাড়ি ওঠে আর না হয় পেটে ক্ষুধা নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি।

শেফালী বেগমের সাথে কথা হলে জানান, কোনো জায়গা-জমি না থাকায় কলাপাড়া পৌর শহরের বাদুরতরী স্লুইসঘাট এলাকায় মাছ ব্যবসায়ী আনসার মিয়ার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। সেখানে একটি কক্ষের জন্য মাস প্রতি ১ হাজার টাকা দিতে হয় তার। আর সরকারিভাবে একটি ভাতার তালিকায় তার নাম লিপিবদ্ধ হলেও কোনো অর্থ আজও পাননি তিনি। তাই উপরওয়ালাই এখন শেষ ভরসা তার।

লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন বিশ্বাস বলেন, ওই বৃদ্ধা মা আসলেও অত্যন্ত অসহায় একজন মানুষ। তার নাম ভাতার তালিকায় দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত কি একটা সমস্যার কারণে টাকা পাচ্ছেন না তিনি। আর সরকারি ঘরের বিষয়ে বলেন, যখন তালিকা নেওয়া হচ্ছিল তখন তাকে পাওয়া যায়নি। পরে শুনেছি তিনি দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে আমি এখন তার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি। আগে তার ভাতার বিষয়টি সমাধান করতে হবে।

এদিকে সচেতন মহলের দাবি, কলাপাড়া উপজেলায় শতভাগ অসহায় মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর ঘর দেয়া হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তাদের উদাসীনতার ফলে এই অসহায় মা মাথা গোঁজার ঠাঁই থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ