ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

লক্ষ্মীপুর- ৪ আসনে নৌকাকে হারাতে একাট্টা আ.লীগের একাংশ

প্রকাশনার সময়: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:৫৮ | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:২১

লক্ষ্মীপুর- ৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনে নৌকার প্রার্থী ঠেকাতে একাট্টা হয়ে স্লোগানও পাল্টে দিয়েছে আ.লীগের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ। এখন তাদের মুখে শ্লোগান হচ্ছে- ‘মামুন ভাই ‘, ‘শামিম ভাই’। নৌকার মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর সমর্থকদের আনন্দ উল্লাসকে ম্লান করে দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে একাট্টা হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলটির বিশাল একটি অংশ। নৌকা স্লোগান নেই তাদের মুখে। এখন অমুক ভাই তমুক ভাই স্লোগানে মুখর রামগতি-কমলনগর জুড়ে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর- ৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনে আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়ে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আওয়ামী লীগ নেতা ইস্কান্দার মির্জা শামিম। নৌকার টিকেট না পেয়ে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েকশ মোটরসাইকেল নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে মাঠে নামেন তার অনুসারীরা।

সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চেয়েছেন মোট ৮ জন নেতা। তারা হলেন, কেন্দ্রীয় আ.লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, লক্ষ্মীপুর জেলা আ. লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, রামগতি উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ, ঢাকা মহানগর যুবলীগ নেতা তাসবীরুল হক অনু, আ.লীগ নেতা ইস্কান্দার মির্জা শামীম, আব্দুজ্জাহের সাজু, শরীফ উদ্দিন ও তুহিনা আক্তার।

এর মধ্যে আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ফরিদুন্নাহার লাইলী এই আসনটির সাবেক সাংসদ ছিলেন।

কিন্তু দলের মনোনয়ন বোর্ড কেন্দ্রীয় আ.লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীকে নৌকার মনোনয়ন দেন। এতে আব্দুল্লাহ আল মামুনের অনুসারীদের মাঝে ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠে। তার অনুসারীদের অনুরোধে মনোনয়ন বঞ্চিত মামুন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দেন। এদিকে মনোনয়ন বঞ্চিত আ.লীগ নেতা ইস্কান্দার মির্জা শামিমও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে মনোনয়ন সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। এ দুই প্রার্থীর স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা গ্রুপিং তৈরি হয়। দলটির ভোট ব্যাংকের উপর দুই প্রার্থী ভাগ বসালে এ আসনে নৌকার বিজয় অনেকটা অনিশ্চিত বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সূত্র আরও জানায়, মহাজোটের শরিক বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান ২০১৮ সালে এ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে এমপি হন। এবারও এ আসনটি মহাজোটের শরিক হিসেবে বিকল্পধারাকে ছেড়ে দিলে মেজর মান্নানই হবেন নৌকার মাঝি। সেক্ষেত্রে মনোনয়ন পাওয়া ফরিদুন্নাহার লাইলীও বাদ পড়তে পারেন।

এমনটাই জানিয়েছেন কয়েকজন নেতা। তবে আ.লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে মহাজোটের বৈঠকের পর সব কিছু পরিষ্কার হওয়া যাবে বলে জানান নেতাকর্মীরা। বর্তমানে এ আসনে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা গ্রুপিং ও নানা মত পথ শুরু হয়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে- আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ইস্কান্দার মির্জা শামিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে থাকলে নৌকাকে বিজয় করা অসম্ভব হয়ে পড়বে দলের জন্য। এই নিয়ে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা।

জানতে চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের লক্ষ্য মানুষকে ভোটকেন্দ্রমুখী করা। প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ নির্বাচন হলে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে। এ লক্ষ্যে দলের বিশাল একটি অংশ আমার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। আমরা কোনো ভাড়াতে এমপি চাই না। এলাকার উন্নয়নে শেষ পর্যন্ত মাঠে আছি।

অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ইস্কন্দার মির্জা শামিম বলেন, দলের হাইকমান্ড বলছেন, স্বতন্ত্রতে কোনো বাধা নেই। তাই আমি আমার জনগণের অনুরোধে প্রার্থী হয়েছি। পরবর্তীতে দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিব।

কমলনগর উপজেলা আ. লীগের সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রাজু বলেন, দলের সভানেত্রী যাকে নৌকা দিয়ে আমাদের মাঝে পাঠিয়েছেন। আমরা তাকে স্বাগত জানিয়েছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকাকে বিজয় করতে চেষ্টা চালাবো। আর যারা নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় আ. লীগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রামগতি উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাচাই-বাচাই করে লাইলি আপাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। কিন্তু ব্যক্তি স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটায় অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। এটা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের শামিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।

রামগতি পৌরসভার মেয়র ও লক্ষ্মীপুর জেলা আ.লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এম. মেজবাহ উদ্দিন মেজু বলেন, আমরা নৌকার পক্ষে, শেখা হাসিনার পক্ষে। কে কি করলো সেটা দেখার বিষয় নয়। নেত্রীর নৌকাকে বিজয় করতে মাঠে আছি।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ