ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

১১ কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে বন বিভাগের তদন্ত শুরু

প্রকাশনার সময়: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:২৪ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:৪৮

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টেন্ডার বাণিজ্য করে সরকারের প্রায় ১১ কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) এ বিষয়ে বন বিভাগের বগুড়ার সামাজিক বন অঞ্চলের অফিসে সাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। চাঞ্চল্যকর এই অভিযোগটি বন অধিদফতরের নির্দেশে তদন্ত করছেন বগুড়ার বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

জানা গেছে, বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় সরকারের ১১ কোটি টাকা ক্ষতি করে কোটি কোটি টাকার টেন্ডার বাণিজ্য করেছে একটি চক্র। বছরের পর বছর এভাবেই শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরে। এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বন অধিফতরের উপ-প্রধান বন সংরক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। তার আগে এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে।

বন অধিদফতরের দেয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর রংপুর সামাজিক বনায়ন বিভাগ প্রায় ২ হাজার ৩শ লট বিক্রির জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে। ১৮ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত দরপত্র গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ১৫ হাজারের অধিক দরপত্র বিক্রি হলেও রহস্যজনকভাবে মাত্র ২ থেকে ৩ হাজার দরপত্র জমা হয়। কারণ হিসেবে অভিযোগ করা হয়েছে, রংপুর আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়দানকারী ডিজেল আহমেদ ও তার সহযোগীরা মিলে অন্যান্য দরপত্র ক্রেতাদের ভয়-ভীতি, হুমকি-ধমকি দিয়ে দরপত্র জমাদানে বিরত রাখেন। যারা দরপত্র জমা দিয়েছেন তারা ডিজেল আহমেদের সঙ্গে সমঝোতা করে দরপত্রে অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে যারা দরপত্র পাবেন তারা প্রত্যেকে প্রতিটি লটে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ডিজেল আহমেদকে প্রদান করবেন বলে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়।

বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় দীর্ঘদিন যাবৎ টেন্ডার বাণিজ্য করছেন এক সময়ের বিএনপির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা নামধারী ডিজেল আহমেদ।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, রংপুর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ করিম, হেড ক্লার্ক শাহ আলম ও অফিস সহকারী গোপাল বাবুসহ আরও কয়েকজন এই ডিজেল চক্রের অপকর্মে সহযোগিতা করেন। অন্যান্য ক্রেতারা দরপত্র জমা দিতে গেলে সশস্ত্র ডিজেল বাহিনী তাদের মারধর করে বের করে দেয়। গত ১৬ নভেম্বর এমন ঘটনা ঘটে রংপুর বন বিভাগের অফিসে। বন বিভাগের অফিস থেকেই সিন্ডিকেটের লোকজন ডিজেলকে খবর দেয়। এরপর তার লোকজন সেখানে পৌঁছে সন্ত্রাসী কায়দায় দরপত্র ক্রেতাদের ভয় ভীতি দেখিয়ে দরপত্র জমা দিতে দেয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, এর আগেও রংপুর বন বিভাগের অফিসে দরপত্রের খোঁজ নিতে গিয়ে হুমকি-ধামকি, অপহরণ ও মারধরের শিকার হয়েছেন একজন দরপত্র ক্রেতারা। এ ঘটনায় রংপুর মেট্টোপলিটনের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ভুক্তভোগী।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জুন সামাজিক বনায়নের লট বিক্রির জন্য একটি দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রংপুর বন বিভাগ। গত ১১ সেপটেম্বর এ বিষয়ে খোঁজ নিতে রংপুর বন বিভাগে যান মো. শিবলী সাদিক জিম (১৯) ও তার শ্বশুর মো. শাহজাহান আলী (৫০)। তখন বন বিভাগের কর্মচারী গোপালবাবু ও হেড ক্লার্ক শাহ আলম তাদের বসিয়ে রেখে খবরটি ডিজেল আহমেদকে জানিয়ে দেন। এ সময় শিবলী সাদিকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করে হুমকি দিয়ে ডিজেল আহমেদ তাদের চলে যেতে বলেন। এ সময় প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে শিবলীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ডিজেল। কিন্তু তারা অফিস ত্যাগ না করায় এর কিছুক্ষণ পরে ডিজেলের লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় বন অফিসে গিয়ে শিবলী সাদিক ও তার শ্বশুর শাহজাহান আলীকে বন বিভাগের কর্মচারী গোপাল বাবু ও শাহ আলমের সামনে থেকে ধরে গণেশপুর ক্লাব মোড়ের মসজিদের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের বেধক মারধর করা হয়। তাদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত ১৩ নভেম্বর দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানা সদরের ভবানীপুর বিটের ২৯৭টি লটের উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে সবার উপস্থিতিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে সর্বোচ্চ দরদাতাকে দরপত্র প্রদান করা হয়। এতে প্রতি সেফটি কাঠের গড় মূল্য ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত ডাক উঠে। অন্যদিকে, রংপুর সামাজিক বনায়নে প্রতি সেফটিকাঠের গড় মূল্য মাত্র ৩২০ থেকে ৪৩০ টাকায় দরপত্র প্রদান করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে প্রতিটি লটে ২৪০ থেকে ২৬০ সেফটি কাঠ পাওয়া যায়। সেই হিসেবে ২ হাজার ৩শ লটের গড়ে কাঠের পরিমাণ ৫ লাখ ৭৫ হাজার সেফটি। হিসাব অনুসারে দিনাজপুরের তুলনায় রংপুর সামাজিক বনায়নে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে সরকার প্রায় ১১ কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বন অধিদফতরের উপ-প্রধান বন সংরক্ষক মো. জগলুল হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ