ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পাহাড় কাটায় অপ্রতিরোধ্য কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির দুই ভাই

প্রকাশনার সময়: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৩৫

পাহাড় কাটায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেনের দুই ভাই শুক্কুর ও গফুর। রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ১০ থেকে ১২টি পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে যাচ্ছেন তারা। দিনে কম হলেও রাত ৮টা থেকে ভোর পর্যন্ত চলে তাদের এই পাহাড় কাটা।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) জোয়ারিয়ানালার বদু কাটা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে লাগোয়া প্রায় ৫ একর আয়তনের একটি পাহাড় কাটা হচ্ছে। ২৫০ ফুট উঁচু এ পাহাড়ের অর্ধেকের বেশি এরই মধ্যে কাটা হয়ে গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাকিটাও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে জানান স্থানীয়রা।

তাদের অভিযোগ, স্থানীয় সাইফুল ইসলাম নামের এক মাদক কারবারী পাহাড়টি কাটছে। আর তাকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শেল্টার দিচ্ছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দামের ভাই গফুর। সাদ্দামের ভাই শুক্কুর ও গফুরের নেতৃত্বে একটি চক্র পাহাড় কেটে মাটি ও বালু বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বিক্রি করছে।

স্থানীয়দের অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। পাহাড় কাটার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় বনবিভাগ। এ সময় পাহাড়কাটার সঙ্গে যুক্তরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে সাদ্দামের ভাই গফুর উপস্থিত হয়ে আদালতের ডিগ্রি পেয়ে পাহাড়টির মালিক স্থানীয় সাইফুলের বলে দাবি করেন। আদালত থেকে পাওয়া রায়সহ যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জ কর্মকর্তার অফিসে হাজির হতে গফুরকে নির্দেশ দেন এই বন কর্মকর্তা।

পরে প্রতিবেদককে নিউজ না করতে এবং বনবিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করার এক প্রকার প্রস্তাবও দেন গফুর।

নিজেদের ‘অসহায়ত্ব’ স্বীকার করে বনকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, পাহাড় কাটা, বালু উত্তোলন, সরকারি জমি দখলসহ ওই এলাকার পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কর্মকাণ্ডে সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করছেন শুক্কুর ও গফুরসহ সাদ্দামের অনুসারীরা। সেখানকার পরিবেশ বিধ্বংসী যে কোনো কাজ সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন তারা। বন রক্ষায় যেকোন পদক্ষেপ কিংবা অভিযানে গেলে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামের স্বজনরা। তার ভাইদের ক্ষমতার প্রভাবে এক প্রকার কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বনকর্মীরা।

পরিবেশবাদী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নে পাহাড়-টিলা কাটার রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। পাহাড়খেকো শুক্কুর ও গফুরের অপতৎপরতায় একের পর এক সাবাড় হয়ে যাচ্ছে সংরক্ষিত পাহাড়। সংরক্ষিত বন দখল করে উঁচু-নিচু ও টিলা কোনো পাহাড়ই অবশিষ্ট রাখছে না তাদের নেতৃত্বাধীন পাহাড়খেকো একাধিক চক্র। সংরক্ষিত পাহাড় কেটে প্লট আকারে বিক্রিও চলছে। পাশাপাশি সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহারের জন্যও পাহাড় কেটে প্রতিদিন শত শত গাড়ি মাটি বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতাচ্ছেন তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, সাদ্দাম ছাত্রলীগ সভাপতি হওয়ার আগে একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে সাত থেকে নয়টি পাহাড় কেটে মাটির ব্যবসা চালালেও এসব বন্ধে কারও তৎপরতা দেখিনি। এখন পাহাড় কাটার মাটি ১০ থেকে ১৫টি ট্রাকে ভরে দিনে ও রাতে কক্সবাজার শহর, রামু ও ঈদগাঁও উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। পাহাড় নিধন ও মাটির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সাদ্দামের ভাইসহ তার স্বজনরা। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজন মুখ খোলার সাহস পান না।

জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জ কর্মকর্তা কে এম কবির বলেন, পাহাড় কাটার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাইনি। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রতিনিধি হয়ে একজন আমাদের কাছে এসে পাহাড়টির মালিকানা নিয়ে সাইফুলের পক্ষে আদালতের রায় রয়েছে বলে দাবি করেছিলো। কিন্তু কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। আগামী রোববারের মধ্যে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নুরুল আমিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

সংরক্ষিত বনে পাহাড় কাটার বিষয়ে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি পরিবেশ অধিদপ্তরের। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ