বিদ্যুৎ জ্বালানি খরচ বিহীন ফল, সবজি কৃষি শস্য সংরক্ষণাগার জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বার ব্যবহারে সুফল পাচ্ছেন কৃষক আ. সাদেক।
আ. সাদেক নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের লোচনপুর গ্রামের এক প্রান্তিক কৃষক। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সহযোগিতায় তৈরি করা চেম্বারে সবজি সংরক্ষণ করে ন্যায্যমূল্য পেয়ে খুশি তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে কৃষক আ. সাদেকের বাড়িতে প্রবেশের পর চোখে পড়লো বিদ্যুৎ জালানি ছাড়া সবজি সংরক্ষণে জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বারে কৃষক ও তার সহধর্মিণী খেত থেকে উঠানো সবজি রাখছেন হিমায়িত এই পদ্ধতি ব্যবহার করে।
কুলিং চেম্বারটিতে দেখা যায়, একটি ৫শ লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পানির ট্যাংক, ইট, বালু, প্লাস্টিকের পাইপ, কটনবাট এসব দিয়ে যার বাহিরের দৈর্ঘ্য ২.১৫ মিটার এবং প্রস্থ ১.৫ মিটার। ইটের দুই দেয়াল বাদে ভিতরের দৈর্ঘ্য ১.৪০ মিটার এবং প্রস্থ ০.৭ মিটার, উচ্চতা ৬২ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটারের জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বার তৈরি করা হয়েছে। এক বছর আগে স্থাপন করে সুফল পাচ্ছে বিশেষ ধরনের ‘কুলিং চেম্বারে’। যেখানে ৭ থেকে ৮ দিন পর্যন্ত সবজি সতেজ থাকে।
সাদেকের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, এর আগে হাটে অবিক্রিত সবজি পরবর্তীতে বাজারজাতকরণে সংরক্ষণ করতে সমস্যা হতো, ন্যায্যমূল্য পেতাম না, পঁচে নষ্ট হয়ে যেত। এতে প্রায়ই লোকসান গুনতে হতো। এখন অবিক্রিত সবজি সংরক্ষণ করে নির্দিষ্ট হাটের দিন বিক্রি করে ন্যায্যমূল পাচ্ছি। এতে সংসারের আয় রোজগার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে আমরা খুবই আনন্দিত।
আ. সাদেক বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া গত এক বছর আগে বাড়ির আঙিনায় বিদ্যুৎ জালানি খরচ বিহীন জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বার স্থাপন করি। এ কুলিং চেম্বারে খেত থেকে উঠানো প্রয়োজন মতো ৬ টি ক্র্যাটে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সবজি রেখে হাটের দিন বিক্রি করতে পারি। এতে অনেক সুফল পাচ্ছি। এই পদ্ধতি দেখতে সাদেকের বাড়িতে প্রতিদিন স্থানীয়রা ভিড় করেন এবং অনেকে এই পদ্ধতি স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ‘পুষ্টি বাগান প্রকল্প’ এর আওতায় উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সাদেকের বাড়িতে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে বিদ্যুৎ জ্বালানি খরচ বিহীন সবজি সংরক্ষণাগার জিরো এনার্জি কুলিং স্থাপন করা হয়। সবজি সংরক্ষণের জন্য ৬টি প্লাস্টিকের ক্র্যাট এক সপ্তাহের জন্য ১শ ২০ কেজি প্রয়োজনীয় শাক সবজি রাখতে পারছেন সাদেক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জিরো এনার্জি কুলিং বিদ্যুৎ জ্বালানি খরচ বিহীন সবজি সংরক্ষণাগারে ফল, সবজি সংরক্ষণ করা যায়। প্রথমে ট্যাংকির মধ্যে পানি ভর্তি করে দিতে হবে। এই পানি প্লাস্টিকের পাইপের ছোট ছোট ছিদ্র দিয়ে কটনবার চুইয়ে বালির স্তরে পৌঁছাবে। এতে কুলিং চেম্বারের তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস নেমে আসে। এভাবে তাপমাত্রা কমিয়ে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি সংরক্ষণ করা হয়। এতে সবজি বা ফল সতেজ থাকে, পঁচনের হার কমে যায়। ফলে কৃষক নির্দিষ্ট সময়ে হাটে বিক্রিতে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে।
বাড়ির আঙিনায় অনাবাদি জমিতে পুষ্টি বাগান প্রকল্পের আওতায় ৬-১০ হাজার টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয়েছে। তাকে দেখে অনেকে তা স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস আগ্রহীদের সহযোগিতা করবে। এতে কৃষি প্রধান এলাকার মানুষ সুফল পাবে বলে আশা করেন তিনি।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ