ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পাবনায় পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলিন হচ্ছে ফসলি জমি

প্রকাশনার সময়: ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:২৯

পাবনায় পদ্মা নদীতে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। ফলে পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুরে নদীর তীর ঘেষে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে কৃষকদের শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করায় স্থানীয় কৃষকদের হয়রানি করা হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, সদর উপজেলার চরতারাপুরের ভাদুরিয়াডাঙ্গী এলাকায় পদ্মা নদীতে প্রকাশ্যে ১৫ থেকে ২০টি ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। শতাধিক ট্রলার মাধ্যমে এসব বালু চলে যাচ্ছে পাবনার পাকশী, সুজানগর, কুষ্টিয়ার পাংশা, কুমারখালী ও রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ চলছে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তদের পাহারায়। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের দেয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি।

শাহীন খান, সাইফুল ইসলাম বাদশা, এনামুল হক, আব্দুল হারুন, সোবহান প্রামাণিকসহ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা বলেন, ‘পাবনার এক বহুল আলোচিত ঠিকাদারের ছত্রছায়ায় পাশ্ববর্তী সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহীন ও সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হাসানের নেতৃত্বে এই বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে শুরু হয়েছে ভাঙন। তীব্র ভাঙনে প্রতিদিন বিঘা বিঘা ফসলি জমি বিলিন হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খুব শিগগিরই এই এলাকায় ফসলি জমি বলতে আর কিছু থাকবে না! দেখার যেন কেউ নেই।

এসব নিয়ে প্রতিবাদ করায় বালুখেকোদের মিথ্যা মামলায় আমাদের অনেক কৃষককে আটক করা হচ্ছে, পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছে। আমরা উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়েই মাবববন্ধন করেছি। তবুও এগুলো বন্ধ হচ্ছে না। বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে আমরা কৃষকরা শেষ হয়ে যাবো।’ খোদ জনপ্রতিনিধিরাই এই প্রভাবশালীদের কাছে অসহায় প্রকাশ করেছেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, নৌ-পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন চরতারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক।

তিনি বলেন, ‘বালু উত্তোলনের ফলে আমার ইউনিয়নের কৃষকদের জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। আমি স্থানীয় এমপি, ডিসি, এসপিসহ বিভিন্ন জায়গা বলেছি কিন্তু কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। সুজানগর উপজেলার চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহিনের নেতৃত্বে কিছু প্রভাবশালী এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। আমরা দ্রুত এর বিরুদ্ধে কার্যকরি প্রদক্ষেপ চাই।’

এর আগে পদ্মা পাড়েই কৃষকরা বিশাল মানববন্ধন করেন। সেখানে অংশ নিয়ে পাবনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারোফ হোসেন বলেন, ‘এটা সত্য সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে এখানে বহুদিন ধরেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এরা স্বার্থান্বেষী মহল, নিজেদের স্বার্থের জন্য দলের নাম ভাঙান। আমরা প্রশাসনকে বলেছি- এটা (বালু উত্তোলন) বন্ধ করতে হবে। আমরা অবৈধভাবে বালু কেটে কৃষকের জমি ক্ষতি করতে দেবো না। প্রয়োজনে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করবো।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করে অভিযুক্ত দোগাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হাসানের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। অপরদিকে বিষয়টি অস্বীকার করে সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামান শাহীন বলেন, ‘আমর নাম তো দূরের কথা, চরতারাপুরে তো বালুই উত্তোলন হচ্ছে না। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে আমি নিজেই নিজের ফাঁসি নেবো। চরতারাপুরে পদ্মায় কোনো বালু উত্তোলন হচ্ছে না।’

এ ব্যাপারে পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাহমিদা আক্তার বলেন, ‘যখন মানববন্ধন হয়েছিল সেখানে আমি গিয়েছিলাম। তখন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল, তখন কৃষকদের আমি বলে আসছিলাম আবার বালু উত্তোলন করলে আমাকে জানাতে কিন্তু তারা পরে আর কিছু জানাইনি। কিন্তু ওই অঞ্চলে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’

পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, বর্তমান আন্দোলন-সহিংসতার কারণে জেলা পুলিশের পক্ষে এইসব অবৈধ বালু মহলে বিশেষভাবে নজর দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, তবে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এজন্য জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ, নৌ-পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবো।’

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ