অসময়ে মুশলধারে বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। বাজার করতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
সাইফুল ইসলাম নামের একজন মুদি দোকানের কর্মচারীর সাথে কথা হয়। তিনি জানান, মাসে বেতন পাই সাড়ে ৭ হাজার টাকা। প্রতিদিন ক্রেতাদের কাছ থেকে বকশিস পাই দেড়শ বা ২শ টাকার মতো। বাসা ভাড়া দিতে হয় ৪ হাজার টাকা। স্ত্রী-সন্তান ও মাসহ ৫জনের পরিবার। এক বস্তা চালের দাম ২৫শ টাকা, তেল-নুন-পেঁয়াজ কিনতেই চলে যায় হাজার পাঁচেক। নিজেরও মায়ের ওষুধে চলে যায় আরও ২ হাজার। সপ্তাহে একদিন সবজি এবং মাছের বাজারে গেলে ১ হাজার টাকার মতো লাগে। সবজি বা মাছ বাজারে যাই সন্ধার পরে। যদি কিছুটা কম পাওয়া যায়। সে-ই কোরবানির ঈদের সময় গ্রামের বাড়িতে গরুর গোস্ত খেয়েছি। বাচ্চারা মাঝে মাঝে আবদার করে। কিন্তু কিনতে পারি না।
এতো গেলো একজন নিন্মবিত্ত মানুষের কথা। এমনিভাবে কথা হয়, ফরিদ উদ্দিন, সোহেল রানাসহ ৫/৬জন ক্রেতার সাথে। সবারই আক্ষেপ, এ দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পিঁছনে নানান অজুহাত থাকলেও আমাদের আয় বৃদ্ধির কোনো অজুহাত নেই। সারাদিন গাধার মতো পরিশ্রম করেও পরিবারের ৫ সদস্যের জন্য মাসিক খাবারের খরচ কোনভাবেই মেটাতে পারছি না। প্রতি মাসে ৮/১০ হাজার টাকা ঋণী হয়ে পড়ি।
সরেজমিনে সোমবার (২০ নভেম্বর) রামগঞ্জ কাঁচা বাজার, সোনাপুর বাজার, বালুয়া চৌমুহনী বাজার ভাটরা বাজার, দল্টা বাজার, লক্ষ্মীধর বাজার গিয়ে দেখা যায়, করোলার কেজি ১০০, মুলা ৭০, কচুর চড়া ছোট ৮০, কচুর চড়া বড় ১০০, দেশি ধনেপাতা ৪০০, কাঁচা মরিচ ২৮০, কুমড়া ৬০, টমেটো ১০০, তরি (ধুন্ধুল) ১৪০, কাঁচা পেঁপে ৩৫, ঝিঙ্গা ১০০, চিচিঙ্গা ১০০, পাতাকপি ১০০, ফুলকপি ১০০, দেশি সীম ৮০/১০০, বরবটি ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া ছোট আকারের কাঁচকলার হালি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া মাছের কেজি ১৭০ হতে ২৮০ টাকা, পাঙ্গাশ মাছের কেজি ১৮০ হতে ২২০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ২৮০ হতে ৪৫০ টাকা, কাতলা মাছ ২৫০ হতে ৪০০ টাকা, চাষ করা কৈ মাছের কেজি ২২০ হতে ২৬০ টাকা, শোল মাছ ৫০০ হতে ৭০০ টাকা, পাবদা মাছ ৩৮০ টাকা হতে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
আরিফ হোসেন নামের বাজারের এক সবজি ব্যবসায়ী জানান, আজ ১ সপ্তাহ পর বাজারে এসেছি। এখানকার সবাই পরিচিত মানুষ। সবজির দাম গত এক মাসের তুলনায় কেজি প্রতি বেড়েছে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ। পাইকারি বাজারেও বেশি। আমরা নিজেরাও ধার-দেনা করে এখন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজি সরবরাহ কম। তার উপর মালও পঁচে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, কুমিল্লা, ঢাকার কারওয়ান বাজার ও চট্টগ্রাম থেকে এ এলাকায় সবজি আসে। ঘাটে ঘাটে গাড়ি আটকায় তার উপর অসময়ে বৃষ্টি। বাধ্য হয়ে মালও কম আনি এখন। কি করবো, পাইকারি বাজারে বস্তা প্রতি সবজির দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪শ টাকা। স্থানীয় এলাকা বা গ্রাম থেকে সবজি আসবে আরো মাস খানেক পরে। তখন কিছুটা সহনীয় হবে সবজির বাজার।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ