ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মিধিলির প্রভাবে নষ্ট কোটি টাকার শুঁটকি

প্রকাশনার সময়: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১০:০২

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বৃষ্টিপাতের কারণে বাগেরহাটের সুন্দরবনের দুবলারচরে প্রায় কোটি টাকার শুঁটকি মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। পচে যাওয়া ওই সব শুঁটকি থেকে এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাওয়া মাছের পরিমাণ প্রায় ৬০ হাজার কুইন্টাল।

এসব মাছ সাগরে ফেলে দিতে হবে বলে জানান ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন আহম্মেদ। ঘূর্ণিঝড় মিধিলি শুক্রবার দুপুরে খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে মোংলা-পায়রা উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। এর প্রভাবে বুধবার সন্ধ্যা থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সুন্দরবনের বিভিন্ন চড়ে বৃষ্টি ঝরতে থাকে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব এলাকায় ভারি বর্ষণ হয়। ঝড়ো বাতাস এবং বৃষ্টিপাতের কারণে সুন্দরবনের শেলারচর, নারিকেলবাড়িয়া, মাঝেরকেল্লা ও আলোরকোলে শুঁটকির জন্য শুকানো এবং কাঁচা অবস্থায় প্রায় ৬০ হাজার কুইন্টাল মাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ওইসব মাছ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাগেরহাটের মোংলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময়ে সুন্দরবন উপকূল এবং সাগর মোহনায় ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সে সঙ্গে দমকা বাতাস বয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলাধীন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন শেলারচর, নারিকেলবাড়িয়া, মাঝেরকেল্লা ও আলোরকোল নিইে দুবলারচর। ৩ নভেম্বর থেকে এই চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মৌসুম। যা চলবে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত। বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে ১০ হাজারেরও বেশি জেলে, মহাজন, শ্রমিক ওই সব চরে গিয়েছেন।

এক হাজার ৩৫টি অস্থায়ী ঘর করে জেলেরা ওই সব চরে অবস্থান করছেন। সেখানে জেলেরা সাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরার পর ওই সব চরে নিয়ে কাটা-বাছা এবং মাছ শুকানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কিছু মাছ শুকানো হচ্ছিল, আবার কিছু মাছ শুকানোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল। কিন্তু, ২ দিন ধরে বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাসে চরে থাকা কাঁচা, অর্ধশুকনা এবং প্রায় শুকনা সব মাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। মাছ পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জেলে-মহাজনদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

দুবলারচর জেলে টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার খলিলুর রহমান বলেন, বুধবার সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর আবহাওয়া বিভাগ মোংলা বন্দরকে ১ নং বিপদ সংকেত জারি করে। ওই দিন সন্ধ্যা থেকে ওই সব এলাকায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। তিনি মাইকিং করে ঘূর্ণিঝড় এবং বৃষ্টি হতে পারে এ জন্য জেলেদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বলেছেন।

তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত এবং ঝড়ো বাতাসের কারণে ওই চারটি চরে সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কুইন্টাল মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। জালে ধরা পড়ার পর বেশ কিছু মাছ জেলেরা আবার সাগরে ফেলে দিয়েছে। এখন চরগুলোতে পচা মাছের দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দ্রুত এসব মাছ এখান থেকে না সরালে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পচে প্রায় এক কোটি টাকার মাছ নষ্ট হয়ে গেছে বলে তিনি ধারণা করছেন। কামাল উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণে সুন্দরবনের চরগুলোতে শুঁটকি মৌসুমে জেলেদের কোটি টাকার উপরে মাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব পচা মাছের দুর্গন্ধে সেখানে জেলেদের থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। পচা মাছ সাগরে ফেলে দিতে হবে। তা না হলে পচা মাছের দুর্গন্ধে ওই চরগুলোতে মানুষ অবস্থান করতে পারবে না।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের কারণে দুবলারচরে শুঁটকি মৌসুমে জেলেদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করার জন্য সেখানে দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের স্টাফদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেলে ক্ষতির সঠিক হিসাব জানা যাবে।

দুবলারচর থেকে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় বেশ কয়েকজন জেলে জানান, তারা ৩ নভেম্বর দুবলারচরে যাওয়ার পর শুঁটকির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। চরে মাচায় ঝুলিয়ে এরই মধ্যে প্রচুর মাছ শুকাতে দেয়া ছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে সব মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

ঝালকাঠি: ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র আঘাতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছে ঝালকাঠি জেলা। জেলার জাতীয় গ্রিডের ৩৩ কেভির সংযোগস্থল বরিশাল শহরতলীর জাগুয়া নামক স্থানে পাঁচটি বিশাল আকৃতির চাম্বল গাছ পড়ে। এতে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে পুরো জেলা।

কাঁঠালিয়া উপজেলায় গাছ উপড়ে পড়ে বহু ঘর গাছের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের নয়টি খুঁটি ভেঙে ও হেলে গিয়ে তিন কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নলছিটি শহরের উপজেলা পরিষদ চত্বরের পুরাতন মসজিদের বারান্দার ওপর গাছ উপড়ে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পৌরসভার সারদল এলাকায় গাছ উপড়ে বিদ্যুতের তারের ওপর পরে বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলার ষাটপাকিয়া-কালিজিরা এলাকা, দপদপিয়া লঞ্চঘাট এলাকায়ও বেশ কিছু বড় গাছ বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের ওপর উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকা। এ ছাড়াও জেলার চার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঝালকাঠির ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইনে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে গেছে। এতে জেলাজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে।

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার লঞ্চঘাটসংলগ্ন বিষখালী নদীর তীরের এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উপকূলীয় উপজেলা কাঁঠালিয়া। একটানা ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টি এবং জোয়ারে বেড়েছে ঝালকাঠির সব নদীর পানি। জেলার বিভিন্ন আবাদি জমিতে গিয়ে দেখা গেছে আমন ধানের অধিকাংশই দমকা হাওয়ায় শুয়ে পড়েছে। অনেক স্থানের আমন আবাদ পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ফলে আমন আবাদের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। শীতকালীন সবজি চাষিও পড়েছেন বিপাকে। এ বৃষ্টিতে শীতকালীন শাকসবজি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা চাষিদের। ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, বৃষ্টি ও বাতাসে শুয়ে পড়া আমন ধানের তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। আমান আবাদে যে-সব বীজের মাথায় ধান এসেছে সেগুলো শুয়ে পড়েছে। কিন্তু এখনো বেশিরভাগ ধানে থোর পর্যন্ত হয়েছে, মাথায় ভার না হওয়ায় সেগুলো শুয়ে পড়বে না। জেলায় আনুমানিক ৫০০ হেক্টর পাকা আমন, ২০০ হেক্টর দুধকলম ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ