সোনালী আঁশ পাটের রাজধানীখ্যাত ফরিদপুরে এবার পাট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। তবে ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে কিছুটা হতাশ পাট চাষিরা।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল সাড়ে দশ লাখ বেল (১৮০ কেজিতে এক বেল) যার চেয়ে উৎপাদন কিছুটা বেশি হয়েছে।
দশ বছর আগে ২০১০-১১ সালে ৭৫ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল আট লাখ ৭৩ হাজার ৫৩ বেল পাট।
চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে; উৎপাদন হয় লক্ষ্যমাত্রা ১০ লক্ষ ৫২ হাজার বেলের বেশি।
জেলার পাট উৎপাদনে প্রসিদ্ধ নগরকান্দা, সালথা, বোয়ালমারী উপজেলার পাট চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতে পাট আবাদে একাধিক সেচ দিয়ে পাট বপন করায় শুরুতেই চাষিদের বাড়তি খরচ হয়েছে। আবার পাট কাটা, নেওয়া-ধোয়া ও শুকাতে অন্যান্য বছরের চেয়ে শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
জেলার পাটের বাজার কানাইপুর, সাতৈর, কৃষ্টপুর, নগরকান্দা, সালথা গিয়ে দেখা যায়, চলতি সপ্তাহে কৃষক মণ প্রতি পাটের দর পাচ্ছেন প্রকার ভেদে ৩১ শ থেকে ২৬শ টাকা।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী রথীন্দ্র নাথ সিকদার নিপু বলেন, উৎপাদন মৌসুম শুরুতে পাটের দর মণ প্রতি ৪ হাজার পর্যন্ত গিয়ে ছিল। বর্তমানে (চলতি সপ্তাহে) এই বাজারের সব থেকে ভালো পাটের দর মণ প্রতি ৩১শ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। আর একটু নিম্নমানের পাটের দর ২৫শ থেকে ২৬শ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।
ভরা মৌসুমে বাজারে পাটের আমদানি কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছল চাষিরা বাড়তি লাভের আশায় বাজারে পাট কম তুলছেন।’
বোয়ালমারীর ঘোষপুর এলাকার পাট চাষি আশুতোষ মালো বলেন, ‘ক্ষেতে পাটের উৎপাদন ভালো হয়েছে, তবে খরচ ও যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি পড়েছে। এই কারণে আমরা মণ প্রতি ৩ হাজার থেকে ৩৫শ টাকা দর পেলে বেশ খুশি হতাম।’
সালথার আরেক চাষি নাছির উদ্দিন বলেন, ‘সরকার যেভাবে প্রতিবছর ধান, গমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সেভাবে পাটেরও দর নির্ধারণ থাকলে আমরা চাসিরা ন্যায্য মূল্য পেতাম।’
এদিকে পাটের দর প্রসঙ্গে ফরিদপুর গোল্ডেন জুট মিলের পরিচালক মহাসিনুল ইসলাম গুড্ডু বলেন, ‘আমরা যারা পাট কলের সঙ্গে যুক্ত তাদের দাবি হলো মিলের উৎপাদিত পাট পণ্য বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে যদি পাট ক্রয়মূল্যের পার্থক্য বেশি থাকে তাহলে মিল মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
সে কারণে পণ্যে উৎপাদন মূল্যের সঙ্গে হিসাব মিলিয়ে কাঁচা পাটের দর নির্ধারণ করলে উভয়ের লাভ হবে বলে তিনি মনে করেন।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হযরত আলী বলেন, ‘সোনালী আঁশ খ্যাত ফরিদপুরের উৎপাদিত পাটের চাহিদা বিশ্বজুড়ে। এ জেলার চাষিরা অন্য যেকোনো ফসলের তুলনায় অনেক বেশি পাটের আবাদ করে।’
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করেছে ১০ লক্ষ ৫২ হাজার বেল। তবে এর থেকে বেশি উৎপাদন হয়েছে।
পাটের দরের বিষয়ে এই কৃষি কর্মকতা বলেন, ‘বর্তমান বাজারের যে দরে পাট বিক্রয় হচ্ছে তাতে কৃষকের লাভের পরিমাণ একটু কম হচ্ছে, কারণ মৌসুমের শুরুতে তাদের আবাদ করতে খরচ হয়েছে বেশি।’
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ