ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মাদক ছিনতাইকারী থেকে দুর্ধর্ষ ইয়াবা কারবারি

প্রকাশনার সময়: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ২৩:৩৭

কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলার মাদক জগতে রীতিমতো আতঙ্কের নাম রিদুয়ান। হ্নীলার নাফ নদী সীমান্তের মাদকের আন্ডারওয়ার্ল্ডে তিনি ডন হিসেবে পরিচিত। তার হাতেই হ্নীলার মাদক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা, অস্ত্র ও মাদকসহ একাধিক মামলার ঝুড়ি মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন দাপটের সঙ্গে টেকনাফজুড়ে ইয়াবা ছিনতাই ও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কেউ ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন না।

দিনে মোটরসাইকেল নিয়ে দাপটের সঙ্গে ঘুরাঘুরি করলেও রাত হলেই নেমে পড়েন মাদক পাচার ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাণ্ডে। এসব অপকর্ম নির্বিঘ্ন চালিয়ে যেতে কিশোর গ্যাংও গড়ে তুলেছেন তিনি।

রিদুয়ান হ্নীলার ৮নং ওয়ার্ডের আলীখালী এলাকার মো. আইয়ুবের ছেলে। তার বাবা-চাচার বিরুদ্ধেও রয়েছে ইয়াবা ও একাধিক অস্ত্র মামলা। সর্বশেষ আগষ্ট মাসে রিদুয়ানের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা হয়েছে ৩টি। একটি অস্ত্র মামলা। ধরা পড়ে তার ৫০ হাজার ইয়াবার চালান। এ ছাড়াও ডিবির ওপর হামলা চালিয়ে মাদক কারবারিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়।

জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট টেকনাফের রঙ্গীখালী এলাকার গহীন পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানায় অভিযান চালায় র‍্যাব। এ সময় বিপুল অস্ত্র জব্দ করা হয়। এ অভিযানে রিদুয়ানের চাচা কবির আহমদসহ ৫ ডাকাতকে গ্রেফতার করে র‍্যাব।

অভিযোগ উঠেছে, চাচা কবিরের অস্ত্রের চালান বেচাকেনার দায়িত্বে রয়েছেন রিদুয়ান। চাচা ওই মামলায় কারাগারে গেলে বর্তমানে অস্ত্র ব্যবসার হাল ধরেছেন তিনি।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, রিদুয়ান ছোট বেলা থেকে বখাটে হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিত ছিল। এক সময় মালয়েশিয়ায় চলে যায়। কিছুদিন সেখানে অবস্থানের পর দেশে ফিরে নেমে পড়েন মাদক কারবারে। এরপর থেকে রাত হলেই রিদুয়ানের আসল মুখোশ বের হয়। গ্যাংয়ের সদস্যদের নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে বেরিয়ে পড়েন তিনি। এ সময় তার মুখে মাস্কপরা থাকে। রিদুয়ানের টার্গেটে থাকে অস্ত্র বেচাকেনা, মাদক পাচার ছিনতাইসহ বিভিন্ন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নাফ নদীর পাড়ে তার বাড়ি হওয়ায় মায়ানমার থেকে সরাসরি মাদক ও অস্ত্রের চালান নিয়ে আসে চোরাকারবারিরা। সেই চালানগুলোর পাহারার দায়িত্বে থাকে রিদুয়ান ও তার গ্যাংয়ের সদস্যরা। পরে তাদের মাধ্যমে সেই অস্ত্র চলে যায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ সন্ত্রাসীদের কাছে।

সূত্রের দাবি, সম্প্রতি গভীর রাতে নাফ নদীর পাড়ে দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে একটি বড় মাদকের চালান ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এমন কাণ্ড রিদুয়ান ও তার গ্যাং ঘটিয়েছে। হ্নীলার কয়েক সীমান্ত দিয়ে মাসিক চুক্তি করে তার শেল্টারদাতা মায়ানমার থেকে মাদক আনছেন একটি চক্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, অস্ত্রবাজ রিদুয়ানের ছত্রছায়ায় একটি চক্র নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে মাদক পাচার করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তার হাত ধরে এলাকার উঠতি বয়সী তরুণদের সঙ্গে কিছু সংখ্যক তরুণীও মাদক পাচারে ঝুঁকে পড়েছে। ইদানিং হ্নীলার মাদক ব্যবসার পরিস্থিতিটা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এলাকাবাসী জানান, মাদক ব্যবসায়ী রিদুয়ানের উৎপাতে এলাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাদক ছিনতাই, মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। তার বিরুদ্ধে কিছুদিনের মধ্যে কয়েকটি মামলা হলেও বন্ধ হয়নি এসব কর্মকাণ্ড। বরং আরও এসব ঘটনা বেড়েছে।

তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে মাদক কারবারিদের যোগসূত্র থাকায় তারা মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে না। শুধু মাদক পাচারকারীদের ধরে। যারা মূলত ব্যবসায়ী তারা সর্বদাই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তাতে প্রতিনিয়তই চলছে মাদক ব্যবসা। এতে ক্ষিপ্ত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।

এ ব্যাপারে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবাইর সৈয়দ বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের শেকড় যত গভীরে থাকুক তা নির্মূল করতে আমরা সবাই চেষ্টা চালাচ্ছি। এ ছাড়াও নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে মাদক কারবারিদের গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছি। তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ