ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কালিয়াকৈরে ড্রাগন চাষে সাফল্য

প্রকাশনার সময়: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:২৮

ড্রাগন একটি বিদেশী প্রজাতীর সুস্বাদু রঙ্গিন ফল হলেও বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এই ফলের চাষ ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। প্রথম দিকে এই সুস্বাদু ফলকে জনসাধারণ বিদেশী ফল মনে করলেও এখন এটি একটি দেশীও ফল হিসাবেই পরিচিতি লাভ করেছে। ফলটি এখন বাংলাদেশে চাষ হলেও মূলত আমেরিকার জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর ফল এটি।

ড্রাগন ফল এক ধরনের ফণীমনসা (Cactus) প্রজাতির ফল। ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল গোলাপি রঙের ড্রাগন ফলের দাম বেশি হলেও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা চমকে ওঠার মতো। বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে বিদেশি এই ফল জনপ্রিয়তা লাভ করছে। অনেকে এই ফল চাষ করে স্বাবলম্বীও হয়েছেন।

ছবিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগন ফল গাছ। সবুজ গাছে শোভা পাচ্ছে গোলাপি, লাল আর সবুজ ফল। স্বপ্নীল পরিপাটি এ বাগানটি গড়ে তুলেছেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের কুশুলনাথ গ্রামের মো.মামুনুর রশিদ। নিজের পতিত অনাবাদি জমিতে বিদেশি ফলের চাষ করে সফলতা দেখছেন তিনি।

বাগান সংরক্ষন কারী সাখাওয়াত হোসেন জানান, প্রথম দফায় তার বাগানে ড্রাগন গাছের কাটিং চারা রোপনের উপযোগি মাটি তৈরি করে। পরে দুই হাজার পিস ড্রাগন ফলের গাছ রোপন করেন। দ্বিতীয় দাফায় পরিচর্যা শুরু করে, সিমেন্টের খুটিতে চার থেকে পাচটি করে গাছ পেচিয়ে দেয়। এতে করে একটি করে ড্রাগন ফলের জোপ তৈরি হয়। তিনি প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। চলতি সিজনে তিনি ২০০কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় লক্ষ টাকা হবে।

তিনি আরও বলেন, আগামী বছর তার বাগানের গাছ ফলনের পরিপক্কতা হবে। এতে করে উক্ত বাগানের প্রতিটি জোপ থেকে ২৫ থেকে ৩০ কেজি ফলন হতে পারে। বালাই ব্যবস্থাপনা ভালো থাকলে ২০ বছর পর্যন্ত ফলন আসতে থাকবে বলে জানান তিনি।

ড্রাগন বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি ড্রাগন জোপ আর প্রতিটি জোপে চার থেকে পাচটি করে বিভিন্ন আকার-আকৃতির লতানো গাছ। প্রতিটি গাছে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের মাটিতে বিদেশি ফুল ও ফলের বাহারি সাজ। ড্রাগন গাছ থেকে ফুল ও ফল হওয়ার আগ পর্যন্ত কঠোর নিরীক্ষণের মাঝে রাখতে হয় এবং ফল পরিপক্ক হয়ে গেলে নির্দিষ্ট সময় তা সংগ্রহ করে বাজারজাত করতে হয়।

ক্ষেতের এক একটি ড্রাগন ফল ৬০০-৮০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের হয়। বাগান থেকে প্রতি কেজি ড্রাগন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ তার বাগান থেকে ড্রাগন চারা কিনে নেন। শীত মৌসুমে প্রায় চার মাস ছাড়া বছরের বাকি আট মাস ড্রাগনের ফলন অব্যাহত থাকে। ১৫ দিন পরপর ফল তোলা যায় বলে জানা গেছে।

ড্রাগন একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। লাল ছিলকা এবং রসালো মিষ্টি ও কালো ক্ষুদ্রকালো বিজে, বাহিরটা সাজ কাটা। চমৎকার আকৃতি এবং দারুন সব পুষ্টিগুণের ড্রাগন একটি সুস্বাদু ফল।

ড্রাগন ফল উচ্চ ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণের ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোক ঝুঁকি হ্রাস পেতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে ড্রাগন। ড্রাগন ফল কম ক্যালরিযুক্ত তবে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে ভরপুর। এটিতে প্রচুর পরিমাণে গায়ত্রী ফাইবার রয়েছে। ড্রাগনের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ড্রাগন চাষি মো. মামুনুর রশিদ জানান, নিজ উদ্যোগে তৈরি করেছেন পিংক রোজ জাতের ড্রাগন ফলের বাগান। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সোস্যাল মিডিয়াতে দেখে উৎসাহি হন তিনি। দীর্ঘদিনের ইচ্ছাশক্তি থেকে নিজ প্রয়াসে এক বছরের আগে থেকে তার পতিত অনাবাদি জমিতে পরিক্ষামূলক এক একর জমির উপর ভালো মানের ড্রাগন গাছের কাটিং সংগ্রহ করে রোপন করেন। এতে এক সময় পরিপূর্ণ ফলের বাগানে রুপ নেয়।

তিনি আরো জানান, এবার তার এক একর জমিতে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ফল ও লক্ষাধিক টাকার ড্রাগন চারা বিক্রি করেছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফল প্রেমি ও সৌখিন ড্রাগন চাষিদের জন্য তিনি ফল ও চারা সরবরাহ করছেন। এই ড্রাগন চাষেই নিজে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজের উপজেলায় ড্রাগন চাষের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ড্রাগন ফল বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ফসল। এই ফল চাষের জন্য যেখানে পানি জমে না অবশ্যই এমন উঁচু জমির প্রয়োজন। নিচু জমিতে ড্রাগন চাষ করা যাবে না। ড্রাগন ফল চাষে মোটামুটি ভালো পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয় তাই যারা একটু সৌখিন ও পুঁজি সমৃদ্ধ চাষি তারা এই ফল বেশি চাষ করে থাকে। এই ফলটি অনেক পুষ্টিগুনে ভরপুর। এ বাগান ছাড়া উপজেলার চাপাইর ইউনিয়নেও পাঁচ বিঘার উপর আরেকটি ড্রাগন বাগান আছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে উপজেলায় ড্রাগন চাষের জন্য তেমন কোন আর্থিক সহায়তা নেই তবে এ ব্যপারে আমরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে ভালো পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের উপ-সহকারি কর্র্মকতা ও কৃষি অফিসার বাগান পরিদর্শন করেন।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ